সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে ৯৬ লাখেরও বেশি শিশুর রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ মিলিয়ন আইকিউ পয়েন্ট। সিসার সংস্পর্শে আসার ফলে এসব শিশুর বুদ্ধিমত্তার অবনতিও ঘটছে। সম্প্রতি কিছু গবেষণায় এ বিষয় উঠে এসেছে।
বুধবার এসডো এবং ইউনিসেফ-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশে শিশুদের সিসা বিষক্রিয়া মোকাবিলা শীর্ষক ইন্সেপশন ওয়ার্কশপে কিছু গবেষণার বরাত দিয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী শিশু স্বাস্থ্যের ওপর সিসা বিষক্রিয়ার ক্ষতিকারক প্রভাব এবং সমস্যাটির সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ওয়ার্কশপে এ বিষয়ে একটি থিমাটিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, সিসা দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে শিশুরা এই সিসা বিষক্রিয়া দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ দূষণ মোকাবিলায় দেশে নানান প্রচেষ্টা চলমান থাকা সত্ত্বেও, শিল্প কারখানা থেকে নিঃসৃত দূষিত পানি এবং সীসাযুক্ত রং দ্বারা শিশুরা সিসা বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, এর কারণে বাংলাদেশ আনুমানিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে, যা কি না ২০১৯ সালের দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫ শতাংশের সমান। অতএব, সীসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অনেক অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও শিশুরা সিসার সংস্পর্শে আসায় ক্ষতিকারক প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। সিসা বিষক্রিয়ার সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসকে রফিকুল ইসলাম, চিফ কন্ট্রোলার (অতিরিক্ত সচিব), অফিস অফ চিফ কন্ট্রোলার অফ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্টস। তিনি বলেন বর্জ্য অব্যবস্থাপনা বিশেষ করে ই-ওয়েস্ট থেকে নির্গত সীসা শিশুদের স্বাস্থ্যেকে হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে । এ সমস্যা মোকাবিলায় রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।