ওয়াশিংটন-দিল্লির টানাপোড়েন, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক তলব

0
85

ভারতে বিরোধীদলের ওপর ক্ষমতাসীন দল বিজেপির চলমান দমন-পীড়ন এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার ইস্যুতে পূর্বের অবস্থানে অনঢ় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।স্টেট ডিপার্টমেন্টের মন্তব্যের জেরে বুধবার ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন গ্লোরিয়া বারবেনাকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার দেশটির অবস্থানের কথা পুর্নব্যক্ত করে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারসহ ভারতে চলমান ঘটনাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

পূর্বের বক্তব্য পুর্নব্যক্ত করে ভারতে চলমান ঘটনাগুলো নিরপেক্ষভাবে এবং সময়মতো তদন্ত করার আহ্বান জানান মিলার। তিনি বলেন, তদন্তের আহ্বান নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে তাতে কারো আপত্তি করার কিছু নেই।

ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে ভারতে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান সংকটময় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার নিয়ে মন্তব্য করায় ভারত যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করলো সেটাকে আপনারা কীভাবে দেখছেন? এবং ভারতের বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কিভাবে দেখছেন? বিশেষত আটকের পাশাপাশি দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাবে জব্দ করেছে সরকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলের ওপর অব্যাহত আক্রমণ দেশকে সংকটময় মুহূর্তে ঠেলে দিয়েছে।”

জবাবে মিলার বলেন, “আপনার দ্বিতীয় পশ্নের জবাবে বলতে হয় যে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের গ্রেফতারসহ ভারতে চলমান ঘটনাগুলো আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভারতের সরকার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বলে কংগ্রেস যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়েও আমরা অবগত। এ পরিস্থিতি বিরোধীদলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারণে দলটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বিঘ্নে তাদের প্রচারণা চালাতে পারবেনা মর্মে শংকা প্রকাশ করেছে। আমরা প্রতিটি অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং সময়মতো তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, কূটনীতিকদের বৈঠকে হওয়া ব্যক্তিগত আলাপের বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবোনা। আমরা এর আগে এখান থেকে এ বিষয়ে জনসম্মুখে যেটা বলেছি সেটা হলো আমরা নিরপেক্ষ এবং দ্রুত আইনি পদক্ষেপকে উৎসাহিত করছি। কারো এ বিষয়ে আপত্তি করার কথা না। ব্যক্তিগত আলাপেও এটা আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছি।”

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রের তরফে বলা হয়, কারাবন্দি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অভিযোগের বিষয়ে যেন নিরপেক্ষ এবং সময়মতো তদন্ত নিশ্চিত করা হয়। তারি জের ধরে বুধবার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন গ্লোরিয়া বারবেনাকে তলব করে ভারত। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বৈঠক হয় এই ইস্যুতে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতের কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রের মন্তব্যে আমরা তীব্র আপত্তি জানাই। কূটনীতিতে রাষ্ট্রগুলো একে অন্যের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সম্মান করবে বলে আশা করা হয়।”

গত সপ্তাহে জার্মানির প্রতিক্রিয়ার পর কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের বিষয়ে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কেজরিওয়ালের জন্য ন্যায্য ও নিরপেক্ষ বিচারের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছিল জার্মানি। জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জর্জ এনজওয়েলারকেও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানানোর জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করেছিল।

আবগারি নীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেজরিওয়ালকে। মদ আইনে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিল্লির একটি আদালত তার হেফাজত ২৮ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here