প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের পক্ষে চট্টগ্রামে মুক্তিকামী জনতনার ওপর গুলি চালিয়েছিল জিয়াউর রহমান। এমনকি ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন বাঙালির ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়, তখন হানাদার বাহিনীর সঙ্গেও ছিলো জিয়া।
বুধবার দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যতো মুক্তিযোদ্ধা হত্যার শিকার হয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাজুয়েল্টি হয়েছে জিয়াউর রহমানের দায়িত্ব থাকা সেক্টরে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছিলো জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যে মেজর থেকে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হলো সেটাও কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছিলো। কিন্তু অকৃতজ্ঞ দল বিএনপির নেতারা সেগুলো ভুলে যায়।
পচাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, একজন মেজর ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে চোঙা ফুকালেই স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যায় না। কিন্তু বিএনপি এখনও ভাঙা রেকর্ডের মতো করে বিকৃত ইতিহাস বাজাচ্ছেই।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯ বছরই এ জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের বছর ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে যারা বলছে দেশে কোনো উন্নতি হয়নি, দেশের কিছুই হয় নি; এমনই বলা হতো স্বাধীনতার পর। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুকে সময় দেয়া হয়নি। শুধু নাই নাই বলে সমালোচনা করা হয়েছে। যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনো সহায়তা না করে উল্টো বিরোধিতা করা হয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলো তারা চক্রান্ত করে কিছু মানুষকে ব্যবহার করেছিল। খন্দকার মোশতাককেও তেমন করা হয়েছিলো। যে দোসররা দেশকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে গিয়েছিলো তারা ৭৫ এর পর দেশকে আগাতে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো বিপ্লবে মিত্র শক্তির সহায়তা প্রয়োজন হয়। মুক্তিযুদ্ধে আমরা ভারতের সহায়তা পেয়েছি। ঠিক তেমনি পেয়েছি কিছু দেশের বৈরিতা। মিত্র শক্তিকে সম্মাননা দিয়ে বাংলাদেশই সম্মানিত হয়েছে।
২৫ মার্চ নাকি আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গিয়েছিলেন’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাহলে যুদ্ধটা করলো কে? বিজয় কে আনলো? মুজিবনগর সরকার গঠন করে শপথ নিয়ে তারা যুদ্ধ পরিচালনা করলেন। সরকারপ্রধান ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার গ্রেপ্তারের পর উপ-রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সেই সরকারের অধীনে এ দেশে যুদ্ধ হলো।
তিনি বলেন, একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বিজয় এনে দেওয়া জাতির পিতার মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল বলে সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা, সবই তিনি করেছেন। এ জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই মাত্র তিন বছরে একটি স্বল্পোন্নোত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন শেখ মুজিব। আইন, নীতিমালাসহ সবকিছু করে দিয়ে যান। একটি সংবিধান আমাদের উপহার দিয়েছেন। এতে আমাদের প্রতিটি অধিকারের কথা বলা আছে।
রঙ ঢঙ করতে বিএনপি ওস্তাব এমন মন্তব্য এবং বিএনপির ‘ভারত বয়কট’ প্রসঙ্গে খানিকটা রসিকতার অবতারণা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিএনপির যারা বলছেন ভারতের পণ্য বর্জন করুন তাদের স্ত্রীদের কয়টা ভারতের শাড়ি আছে সেগুলো কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না। আলমারি থেকে স্ত্রীদের ভারতের শাড়ি নিয়ে যেদিন পুড়িয়ে দেবেন, সেদিন বিশ্বাস করবো আপনারা ভারতের পণ্য বর্জন করছেন। ভারতের মশলাও যেন রান্না ঘরে দেখা না যায়।
‘দেশে গণতন্ত্র নেই’ বিএনপির এমন মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চোখে স্বৈরতন্ত্রের ঠুলি পড়া বলেই চোখে গণতন্ত্র দেখতে পায় না। জিয়ার সময় গণতন্ত্র ছিলো- অব দ্যা আর্মি, ফর দ্যা আর্মি এবং বাই দ্যা আর্মি। আমরা যখন নির্বাচিত হয়ে আসি তারা গণতন্ত্র দেখতে পায় না। একই সঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে অতিবাম, অতিডান এক হয়ে গেছে, বিপ্লব করতে করতে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা গণতান্ত্রিক ধারা পছন্দ করে না।
২০০৮ এর নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি আর নির্বাচন চায় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ দলনেতা প্রশ্ন রাখেন, পান মাত্র ৩০ সিট, অথচ চান তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মাজেজাটা কি?
স্বাভাবিক নির্বাচনে বিএনপির ওপর মানুষের আস্থা নেই। ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। গণতান্ত্রিক ধারায় তারা আস্থা রাখতে পারে না বলেই গণতন্ত্রের খোঁজ করে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্য সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি প্রমুখ।