রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ৪নং ভূষণছড়া ইউনিয়নের ১৪৯নং গুইচড়ি মৌজার চান্দবী ঘাট পাড়ায় প্রত্যন্ত দুর্গম একটি গ্রামে অজ্ঞাত এক রোগের প্রাদুর্ভাবে ৫ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উক্ত এলাকায় এই রোগে আক্রান্ত রয়েছে আরও ১০ থেকে ১৩ জনের বেশি গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাস থেকে এই অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হঠাৎ করে শরীর ব্যাথ্যা হয়, প্রচণ্ড জ্বর আসে, বমি বমি ভাব হয় অনেকে রক্ত-বমি করে এবং মারা যায়। এই পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছে আরও ১০ থেকে ১৩ জনের বেশি আক্রান্ত রয়েছে।
গ্রামটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়া গ্রামের আশেপাশে কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না থাকায় পাহাড়ি কবিরাজি চিকিৎসা চলতেছে। তবে এতে কেউ সুস্থ হচ্ছে না। গ্রামবাসীদের ধারণা তারা এর আগে অনেক পুরোনো একটি বটগাছ কেটে পাপ করেছে যা স্থানীয়দের মধ্যে একটি আধ্যাত্মিক গাছ বলে বিশ্বাস। তাই তারা তাদের এই ফল ভোগ করতে হচ্ছে বলে ধারণা করছে।
চান্দবী ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, ওই এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে একটা অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শরীর ব্যাথা হয়, জ্বর আসে, বমি বমি ভাব আসে কারো রক্তবমি হয় এগুলো রোগের উপসর্গ। এই পর্যন্ত ৫ জন মানুষ মারা গেছেন তার মধ্যে আমার স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্রী রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ‘এলাকাটি দুর্গম সেখানে কোন স্বাস্থ্য ক্লিনিক না থাকায় পাহাড়ি কবিরাজি চিকিৎসা চলতেছে। আমার স্কুলের মেনেজিং কমিটির সহ-সভাপতি জানিয়েছেন, আরো নাকি ১৩ জনের মতো আক্রান্ত রয়েছেন।’
বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘ঘটনাটি আমাকেও জানানো হয়েছে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন মানুষ মারা গেছেন। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। সেখানে একটি মেডিকেল টিম পাঠানোর কথা রয়েছে।’
বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং (সাগর) জানান, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে অবগত করেছে। এর আগে বিষয়টি কেউ আমাদের অবগত করে নাই। আমরা এই পর্যন্ত ৫ জনের মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা বৃহস্পতিবার ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন স্যারের সাথে আলাপ করে ৬ সদস্যের একটা মেডিকেল টিম গঠন করেছি। সন্ধ্যার সময় মেডিকেল টিমটি রওনা হয়েছে। আশা করছি কালকে তারা সেখানে পৌঁছে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে।’
রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, ‘আমাদের খবর পেতে খুব দেরি হয়ে গেছে, এলাকাটি খুব দুর্গম আমরা এরই মধ্যে মেডিকেল টিম পাঠানের ব্যবস্থা করেছি এবং এর কারণটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেছি। তবে এটা খাবার থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে বলে আমার ধারণা।’
তিনি আরো জানান, এর আগে নাকি সেই পাড়া পুরোনো একটা বটগাছ ছিলো স্থানীয় গ্রামবাসীরা সেটি কেটে ফেলার কারণে এই অসুখ হয়েছে। তবে এটা কুসংস্কার।