রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

0
120

খবর ৭১: দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার ক্ষয় হয়েছে চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনেই। মাসের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে (বিপিএম৬) রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০ সেপ্টেম্বর তা ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে বড় ধরনের পতন হওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি দায় বাবদ ১৩১ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। আবার রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার বিক্রিও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব কারণে সেপ্টেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। মাস শেষে রিজার্ভ ক্ষয়ের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবেই তা করা হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে আইএমএফের সদস্য দেশগুলো ব্যালান্স অব পেমেন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন করে আসছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তা শুরু করতে সময় নিয়েছে প্রায় এক যুগ। বিপিএম৬ মূলনীতি অনুযায়ী হিসাব করা রিজার্ভও বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে নেয়া এসডিআরসহ স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু দায় বাদ দেয়া হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। আইএমএফ থেকে যদিও শর্ত রয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ থাকতে হবে ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা ২৬ দশমিক ৮০ বিলিয়নে উন্নীত করার শর্তও দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে অবশ্য ২০ সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ আগস্ট রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছিল। সে হিসাবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের ক্ষয়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান উৎস হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ মন্থর। সর্বশেষ গত মাসে (আগস্ট) প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পতন হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে এসেছে কেবল ৭৩ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার কারণেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে; তাও আবার জ্বালানি তেল, এলএনজি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দায় মেটানোর জন্য। পাশাপাশি সরকারের বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্যও ডলার বিক্রি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আর চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের গ্রস রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তারপর থেকেই রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here