খবর ৭১: আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, এটাই কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে এই ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর এই জায়গাটাকে ব্যবহার করা আর এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, এই দেশগুলোকে ধ্বংস করা। এটাই হচ্ছে কারো কারো উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে। ’
পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকাটা নিয়ে নানা ধরনের খেলার একটা চক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে যেখানে সংঘাত ছিল, আমি সরকারে আসার পর সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা। ’
উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাদের পছন্দের গোলামদের ক্ষমতায় বসাতে চায় অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু এটা আমি জানি, আমি বুঝি, যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে আর তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে। এটাই হচ্ছে তাদের প্রচেষ্টা, সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু আঁতেল আছে, জানি না এসব তারা চিন্তা করে কি না; সেগুলো না করেই তারা এদের সঙ্গে সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এই কাজগুলো করে বেড়ায়। ’
চক্রান্তের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তাছাড়া অন্যান্য দেশ, আমি তো বলবো, ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলো তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন আছে, সেটা আমি বিশ্বাস করি। ’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবো, যারা দেশপ্রেমিক তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করি না। ’
ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ভৌগলিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর, অপরদিকে প্রশান্ত মহাসাগর, এই ভারত মহাসাগরেই কিন্তু আমাদের বে অব বেঙ্গল, এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীনকাল থেকে এই জায়গা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নাই, সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ। এই জলপথে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন হয়। ’
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তৎপর দেশগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না, এরা একটা জিনিসই করতে চায়; আজকে যে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিটা আমরা মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের পথে, আজকে দারিদ্র্যের হার আমরা ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেটা ২৫ ভাগ ছিল, সেটাকে আমরা ৫ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। ’
আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে অবাক লাগে যেসব দেশে খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যখন আমাদের কাছে এসে মানবাধিকারের কথা বলে, তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে, ওরা যেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একেবারে উতলা হয়ে পড়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘২০০১ এর নির্বাচনে আমাদের হারার কথা না। সে নির্বাচনে আমাদের জোর করে হারানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া যখন ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, তখন তাদের নির্বাচনী চেতনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমানের নির্বাচনের বিরুদ্ধে তো কথা বলেনি। এরশাদের নির্বাচন নিয়েও কোনো উদ্বেগ দেখিনি। হঠাৎ এবারের নির্বাচনের সময় তারা যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়লো। ’
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের কাজ করছি, এটাই হচ্ছে অনেকের অন্তর্জ্বালা। লুটে খেতে পারছে না, ক্ষমতায় নাই, জনগণকে শোষণ করতে পারছে না, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না। তাই ধোঁয়া তুলছে নির্বাচনের। ’
বিএনপি নির্বাচন চায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির মুখে নির্বাচনের কথা আসে কোথা থেকে? ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া দুই বার ক্ষমতাচ্যুত। ’৯৬ সালে একবার, আরেকবার ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচন। তারপরেও তাদের মুখ থেকে আবার গণতন্ত্রের কথা। ’
তিনি বলেন, ‘আসল কথা ওরা তো নির্বাচন চায় না। ওরা জানে তারা কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে। তাদের দুই নেতা সাজাপ্রাপ্ত। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলতে চায়। তারা জানে জনগণের ভোট পাবে না। সে জন্য নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য যত রকম চক্রান্ত করা, এই চক্রান্তে তারা লিপ্ত। ’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ বেঁচে আছি মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। ’
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।