খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ

0
139

খবর ৭১: এখনও খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ (পায়খানা) করে দেশের ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ জন মানুষ। শতাংশের দিক থেকে মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও প্রতিবছর এ হার কমছে। বাড়ছে টয়লেট এবং উন্নত ও অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি এক জরিপের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিসটিকস-২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, খানার বা পরিবারের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে খানার আকার, খানা প্রধান, খাবার পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহার সুবিধা, সাবান ও পানিসহ হাত ধোঁয়ার অবস্থাসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এসব তথ্যের পাশাপাশি পয়ঃব্যবস্থাপনার সুবিধায় অভিগম্যতার তথ্যও তুলে ধরা হয়।

এ প্রসঙ্গে স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ইন ডিজিটাল প্লাটফর্ম শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এসভিআরএস এমন একটি প্রতিবেদন যেখান থেকে এসডিজির ২৭টি সূচকে তথ্য পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে অষ্টম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১০৪টি ডিআরএফ সূচকের মধ্যে ১৬টি আসে এই প্রতিবেদন থেকে। খানার বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত তথ্যগুলো এসডিজি এবং অষ্টম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করা মানুষের হার কখনো শূন্য শতাংশে আসবে না। কারণ কিছু পকেট এরিয়া আছে যেমন, চর, নদী এবং পাহাড়ি এলাকার মানুষরা খোল জায়গায় মলত্যাগ করতে অভ্যস্ত। তাদের অভ্যাস পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না। তবে আগের তুলনায় এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

বিবিএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টয়লেট না থাকায় খোলা আকাশে পায়খানা করা মানুষের সংখ্যা ২০১৮ সালের জরিপে ছিল ২ শতাংশ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সেটি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এভাবে ২০২০ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছিল ১ শতাংশ। এবার নতুন জরিপে ২০২২ সালে সেটি আরও কমে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াল।
কমছে অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারী: অনুন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালে এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর ২০১৯ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে, ২০২০ সালের প্রতিবেদনে সেটি হয়েছিল ১৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২১ সালে ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদনে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে ।

উন্নত টয়লেটের ব্যবহার বাড়ছে: বিবিএসর এর ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ উন্নত টয়লেট ব্যবহার করত। কিন্তু পরবর্তীতে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালে উন্নত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৫ শতাংশে। এরপর ২০২০ সালে এ সংখ্যা একই ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে সেটি বেড়ে হয়েছিল ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদনে আরও বেড়ে এই হার দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশে।
বিবিএসএর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনা সুবিধায় অভিগম্যতা কমেছে। ২০২১ সালে এটি ছিল ৬৮ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালের প্রতিবেদনে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশে। তবে যৌথ টয়লেট ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২১ সালে এটি ছিল ২৫ শতাংশ। ২০২২ সালের হিসেবে তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৬ শতাংশ।

হাত ধোয়ার চিত্র: প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবান ও পানিসহ হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে উভয়ই একসঙ্গে উপস্থিতির হার বেড়েছে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। সেটি বেড়ে ২০২০ সালে ৭১ শতাংশ হয়েছিল। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন ব্যাপক জনসচেতনতার কারণে এসময় বেশি সংখ্যক মানুষ সবসময় সাবান ও পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করত। কিন্তু করোনা কমে যাওয়ার পর দেখা যায় ২০২১ সালে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশে। সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেটি কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে শুধু সাবান ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। এক্ষেত্রে ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০২১ সালের আরও কমে হয় ১ দশমিক ৮ এবং ২০২২ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে বাড়া-কমার চিত্র বিরাজ করছে শুধু পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ২০১৯ সালে শুধু পানি দিয়ে হাত ধুতো ১৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। সেটি বেড়ে ২০২০ সালে হয় ১৬ শতাংশ, ২০২১ সালে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২২ সালে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে।

বিবিএস আরও বলেছে, হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থাই নেই অর্থাৎ, সাবান ও পানি নেই এমন মানুষের সংখ্যা কমছে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৭ শতাংশ, সেটি কমে ২০২০ সালে হয় ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২১ সালে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২২ সালে হয়েছিল ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here