খবর৭১: দেশে তীব্র দাবদাহে নাকাল মানুষ। মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি জুন মাসেও কম বৃষ্টি হতে পারে। এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল দিনাজপুরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই তুলনায় খানিকটা তাপ কমলেও গরমের অনুভূতি একটুও কমেনি।
এ সময়ে বৃষ্টি বড় কাঙ্ক্ষিত কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন বৃষ্টি বয়ে আনবে মৌসুমি বায়ু। তা আসতে একটু দেরি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, টেকনাফ অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটতে আরও তিন দিন দেরি হতে পারে। এরপর দেশের অন্যত্র তা প্রবেশ করবে। তারপরই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতি মাসের শুরুতে এক মাস মেয়াদি পূর্বাভাস দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই পূর্বাভাস তুলে ধরে মে মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতিও জানিয়েছে তারা। সেখানে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে মে মাসে গড় বৃষ্টি হয় ২৮৪ মিলিমিটার। আর মে মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ১৫৯ মিলিমিটার। দেশের আট বিভাগের মধ্যে এ সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় সিলেটে। এ অঞ্চলে মে মাসে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ৫১০ মিলিমিটার। কিন্তু গত মাসে হয়েছে ২৫৭ মিলিমিটার। মে মাসে সাধারণত ২৪ দিন সিলেটে বৃষ্টি হয়। এবার হয়েছে ১৬ দিন। সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে রংপুর বিভাগে। এ বিভাগে প্রায় ৫১ ভাগ বৃষ্টি কম হয়েছে।
গত মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। সপ্তাহ ধরেই চলে সেই গরম। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে দেখা দেয় লঘুচাপ। সেটি নিম্নচাপ থেকে ক্রমে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হয়। এ ঘূর্ণিঝড় ১৪ মে কক্সবাজার উপকূল পার হয়। মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দুই দিন পর থেকে। কয়েক দিন বৃষ্টির পর আবার শুরু হয় প্রচণ্ড গরম। মে মাসের শেষ থেকে জুনের শুরুতে তা অব্যাহত রয়েছে।
জুন মাসের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুরে এর আগে জুন মাসে ১৯৫৮ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই উত্তরের ওই জেলায় ৬৫ বছর পর এবার তাপমাত্রার রেকর্ড হলো।
শুক্রবার রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রাজধানীতে জুন মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৪ সালে- ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও ও দিনাজপুর অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সেটি অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বলা হয় যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি প্রচণ্ড হয় ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে।