খভর ৭১: দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি আকারের তাপপ্রবাহ। ফলে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু ডলার সংকটের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির সংস্থান না থাকায় দেশজুড়ে বেড়ে গেছে লোডশেডিং।
দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩টি। তবে কয়লা, গ্যাস জ্বালানি তেলের অভাবে বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫২ থেকে ৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। তবে গত ২৪ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত জ্বালানির অভাবে ৪ হাজার ২৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা যায়নি, যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। এছাড়া নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। বাকি ১৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা ব্যবহার করে দিনের বেলায় গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। রাতে উৎপাদিত হয়েছে গড়ে ১৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।
সাধারণত বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়লে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করা হয়। তবে এখন রাজধানীতেও করা হচ্ছে লোডশেডিং। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা লোডশেডিং হয়েছে।
রাজধানীর বাসাবো এলাকায় বসবাসরত বেসরকারি চাকরিজীবী হাসেম তালুকদার বলেন, গতকাল রাতে দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের ফলে সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে এলাকার বাসিন্দা শিমুল আহমেদ বলেন, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হয়েছে। গরম সহ্য করতে না পেরে ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করেছি। পরে রাত তিনটার দিকে ঘুমাতে গেছি।
গরম ও লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি নাকাল হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। মুগদা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় কারেন্ট গেছে। সারারাত ভালোভাবে ঘুমানো যায়নি। গরমে বাচ্চারা ছটফট করেছে।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আশরাফ রনি বলেন, ভোরে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। তাই চেষ্টা করি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে। কিন্তু কয়েক দফা বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করায় সে ঘুম আর হয়নি। সকালে অফিসে এসেও দেখি একই অবস্থা। এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ যাচ্ছে।
বুধবার ঢাকায় তিন ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করেছে বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। তাদের তথ্যমতে, গতকাল ডেসকোর বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। চাহিদার চেয়ে ১৭৯ মেগাওয়াট কম সরবরাহ পেয়েছে তারা। আর একই সময়ে ডিপিডিসির চাহিদা ছিল ১ হাজার ৯০৫ মেগাওয়াট। তারা সরবরাহ কম পেয়েছে ৩২৪ মেগাওয়াট।
এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, বুধবার মধ্যরাতে লোডশেডিং ছিল প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট।
বৃহস্পতিবার পিজিসিবির সর্বশেষ প্রতিবেদনে মোট উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৫০২ মেগাওয়াট।
দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। দৈনিক ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক সব কেন্দ্র চালানোর মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও কয়েক দিনে গড়ে উৎপাদন করা হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদন করা হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট।
এদিকে ডলারের অভাবে কয়লা কিনতে না পারায় বন্ধ হতে চলেছে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ইতোমধ্যেই গত ২৫ মে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। শিগগিরই কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে দ্বিতীয় ইউনিট। ফলে তীব্র আকারে ধারণ করবে লোডশেডিং।
এ বিষয়ে বাংলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, আমাদের জ্বালানিতে কিছু ঘাটতি আছে।কয়েকটা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।তবে আমরা চেষ্টা করছি উৎপাদনের মাত্রা সর্বোচ্চ রাখার।