খবর ৭১: রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকায় বিয়ের তিন দিনের মাথায় নববধূ মনিরা পারভীনকে যৌতুকের দাবিতে হত্যার দায়ে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে মনিরার স্বামী নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক মাফরোজা পারভীনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রেজাউল করিম বিষয়টি জানিয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মনিরার স্বামী নাসিরের ভাই মাসুদ, বোন হাসিনা ও তার স্বামী মিলন, মিলনের ভাই দেলোয়ার হোসেন ও নাসিরের চাচা দিন ইসলাম। এরা সবাই জামিনে ছিলেন। এদিন তারা আদালতে হাজিরা দেন। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
৭ দফা পেছানোর পর রায় ঘোষণা করলেন আদালত। রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিরার বাবা মোস্তফা। আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৮ জুন বিকেল সাড়ে ৫ টায় মনিরা ওষুধ কেনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরিবার তার কোনো সন্ধানও পাচ্ছিল না। পরদিন লোকমুখে জানতে পারেন নাসির হোসেন কাজী অফিসে নিয়ে তাকে বিয়ে করেছেন। একথা শোনার পর মনিরার বাবা মোস্তফা, নাসিরের বাবা হাছেন আলীর কাছে যান এবং মেয়েকে উদ্ধার করে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করেন। তখন হাছেন আলী ক্ষিপ্ত হন এবং তার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না দিলে বাবা, মেয়েকে খুনের হুমকি দেন তিনি।
পরদিন নাসির মনিরাকে নিয়ে তার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার সাথে সাথে নাসিরের বাবা, মাসহ পরিবারের অন্যরা মিলে মনিরাকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে মারপিট, কিল, ঘুষি দিয়ে গুরুতর জখম করে পাশের একটি বালুর মাঠে ফেলে রাখেন। স্থানীয় লোকজন মনিরাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুন সকালে মারা যান মনিরা।
এ ঘটনায় ২২ জুন মনিরার বাবা মোস্তফা খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাসিরের বাবা, মা, চাচাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। তবে মামলাটি তদন্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কেএম আশরাফ উদ্দিন। এরপর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।