দেখা মিলছেনা নিত্য নতুন মডেলের বাইকসহ বাইকারদের সৈয়দপুরে পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে থাই জুয়াড়িরা

0
369

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
সৈয়দপুর উপজেলায় নিত্য নতুন মডেলের বাইকগুলোর তেমন দেখা মিলছেনা। পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে আইফোনসহ বিভিন্ন মডেলের এ্যান্ড্রোয়েড ফোন হাতে নিয়ে আড্ডা দেওয়া সেইসব বাইকারদেরও দেখা মিলছেনা। পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেইসব থাই জুয়াড়িরা এখন আত্মগোপনে। এদের অধিকাংশই সৈয়দপুর ছেড়ে অন্য কোন শহরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া এমন তথ্য মিলেছে। আর এসব হয়েছে সৈয়দপুর থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়া অনলাইনে খেলা থাই জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর থেকে। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল জুয়াড়িদের অন্যতম হোতা মুনেম শাহরিয়ার বর্ষণ (২৩) থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সর্বত্র থাই জুয়াড়িদের মাঝে এখন শুরু হয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। থানা পুলিশও নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে চালাচ্ছে নিয়মিত অভিযান।
সুত্র জানায়, লটারীর মাধ্যমে টাকা জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে থাই জুয়াড়িদের লাইভ প্রোগ্রামের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে একের পর এক ভাইরাল হয়। এ নিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনতে সর্বত্র দাবি ওঠে। ফেসবুকেও চলে নানা সমালোচনা। এ অবস্থায় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সৈয়দপুর থানা পুলিশ নড়েচড়ে বসে। ফলে তাদের (থাই জুয়াড়ি) গ্রেফতারে অভিযানে নামে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। ওই অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৬ এপ্রিল শাহাদত হোসেন সুমন (২৮) ও মেহেরাজ ওরফে শোভন (২৩) নামে দুইজন অনলাইনে খেলা থাই জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেসময় তাদের বিরুদ্ধে প্রবাসীসহ বিভিন্নজনের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় অজ্ঞাতদেরও আসামি করা হয়। ওই মামলার পরে সৈয়দপুরে জুয়াড়িদের মুলহোতাসহ অন্যান্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ এপ্রিল সৈয়দপুরের থাই জুয়ার অন্যতম হোতা সুনেম শাহরিয়ার ওরফে বর্ষণকে শহরের সৈয়দপুর -পার্বতিপুর সড়কের পাশে হোটেল ড্রিম প্লাস রিসোর্টের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুলত বর্ষণ গ্রেফতারের সংবাদেই আতঙ্ক শুরু হয় থাই জুয়াড়িদের মাঝে।
অভিযোগ রয়েছে,গ্রেফতার হওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে থাই জুয়াড়ি বর্ষণসহ অন্যান্যরা প্রবাসীসহ বিভিন্ন মানুষের কাছে লটারী জিতিয়ে দিতে ভূয়া নাম্বার দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। একইভাবে অন্যান্য প্রতারক অনলাইন জুয়াড়িরাও প্রবাসীদের লটারী পাইয়ে দেওয়ার নামে ভূয়া নাম্বার দিয়ে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা।
সূত্রটি জানায়, সৈয়দপুর শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে রয়েছে প্রতারক জুয়াড়ি চক্র। তাদের কারণে সৈয়দপুরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে থাই জুয়া। প্রতিমাসে দুইবার হয় থাইল্যান্ড ভিত্তিক ওই জুয়া। ওই জুয়ায় আসক্ত হয়ে মোনেম শাহরিয়ার বর্ষণ,শাহাদত হোসেন সুমন, মেহেরাজ ওরফে শোভনের মত প্রতারক অনলাইন জুয়াড়িদের খপ্পড়ে পড়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন শতশত প্রবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রতারক অনলাইন জুয়াড়িরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পরিবারের সন্তান রয়েছে। এদের মধ্যে কেউবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার পুত্র, আত্মীয়, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, চর্মকার, হোটেল শ্রমিক, সেলুন কর্মচারিসহ ক্ষুদ্র কৃষক সন্তানও আছে এ তালিকায়।

জানা গেছে, প্রবাসীদের কাছ থেকে এরা প্রতারণার মাধ্যমে অল্পদিনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে রাজকীয় জীবন যাপন করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওইসব জুয়াড়িদের প্রতিবেশীরা জানান, যারা একসময় দিনের খাওয়া জোগাড় করতে অন্যের দারস্থ হতো, তারা এখন কুড়েঘর, টীনের বাড়ি ভেঙ্গে তৈরী করেছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা, হয়েছে গাড়ি, বাড়ি, দোকান পাটের মালিক। শহর দাপিয়ে বেড়াতো আর-১ ফাইভ, সুজুকি জিক্সার, ইয়ামাহা এফ জেডসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের মোটরবাইক নিয়ে। বিমান যোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম যাতায়াত ছিল তাদের কাছে মুড়ি মুড়কির মত। সকালে বিমানযোগে ঢাকা গিয়ে মার্কেটিং করে বিকেলে সৈয়দপুরে আসতো।
ওইসব জুয়াড়িদের কর্মকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল হলে তাদের আইনের আওতায় আনতে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে শাস্তির দাবি ওঠে। ফলে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। এ পর্যন্ত অনলাইনের প্রতারক তিন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানতে চাইলে থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক আহমদউল্লাহ বলেন, জুয়াড়ি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সৈয়দপুরের অনলাইন জুয়াড়িদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে থাই লটারীসহ অনলাইনের সব জুয়াসহ অন্যান্য জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলার তদন্তে বেড়িয়ে আসা জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার করার আহবান জানিয়েছেন সৈয়দপুরবাসীর প্রতি। এজন্য সব ধরণের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here