চিনির কেজি ১৪০ টাকা 

0
203

খবর ৭১: আবার চিনির বাজার অস্থির। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মাত্র দুদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি চিনির মূল্য ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়েছে বড় ব্যবসায়ীরা।

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, মালিবাগ, মেরুল এবং মধ্য বাড্ডা এলাকার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে এসব বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে। আর সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজিতে।

খুচরা দোকানদারদের দাবি চিনি পাওয়া যাচ্ছে না, তাই হঠাৎ করে চিনির দাম বেড়েছে। তারা বলেন, ঈদের আগে যে চিনি বিক্রি করেছি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। সেই চিনি আজ কিনতে হচ্ছে ১৩৪ টাকা কেজিতে। খরচসহ এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে। তাই অনেকে ঈদের পর থেকে চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।

রামপুরা বাজারে  চার জন মুদির দোকানদারের সাথে কথা হয়। তারা জানান, ঈদের পর থেকে তারা চিনি বিক্রি করছেন না। তাদের কাছে চিনি নেই। অর্ডার দেওয়ার পর কোম্পানিও চিনি দিচ্ছে না।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ সকালে চিনির অর্ডার দিয়েছিলাম। ৫০ কেজির এক বস্তা চিনির দাম চেয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি মূল্য ১৩৪ টাকা। তাই চিনি কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।

পাশের আরেক ব্যবসায়ী শাহজাহান  বলেন, ঈদের সময় অল্প কিছু চিনি ছিল। এগুলো ১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে চিনি নেই। কাস্টমার আসে ঘুরে যায় কিন্তু চিনি দিতে পারি না। কোম্পানি বেশি দাম ছাড়া চিনি দেয় না, তাই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।

বাজারে আসা ক্রেতা ছাদেকুজ্জামান টিটু বলেন, ৫টি দোকান ঘুরেছি কিন্তু চিনি পেলাম না। কী অভুত কাণ্ড, দামও বেশি, ঘুরতেও হচ্ছে বেশি, তাও চিনি পাচ্ছি না। তিনি বলেন, শুনেছি দাম বেড়েছে তাই দোকানদাররা চিনিও রাখছেন না।

মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ীরাও একই সুরে কথা বললেন। বরিশাল জেনারেল স্টোরের কর্মকর্তা সুজন বলেন, চিনির কেজি ১৪০ টাকা, তার কমে কোথাও পাবেন না। প্যাকেট চিনির দাম কত? তার উত্তরে তিনি বলেন, প্যাকেটজাত চিনি বাজারে নেই।

বাড্ডা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সুপারশপ স্বপ্নতে প্যাকেটজাত চিনি নেই। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি। দুদিন আগেও ১৩০ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করা হয় সুপারশপটিতে।

মেরুল বাড্ডার কবির স্টোরের কবির হোসেন বলেন, এক কেজি চিনি নিলে ১৪০ টাকা, খুচরা নিলে ১৫০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, গতকালও চিনি বিক্রি করেছি ১৩০ টাকা কেজি। আজ কেনাই পড়েছে ১৩৪ টাকা কেজিতে। তাই বিক্রি করছি ১৪০ টাকা কেজি।

মধ্যবাড্ডার মনির স্টোরের মনির হোসেন বলেন, রোজার প্রথম দিকে চিনি বিক্রি করেছি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি। কিন্তু তারপর শেষের দিকে বিক্রি করেছি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজিতে। ঈদের সময় বিক্রি করেছি ১৩০ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি করছি ১৪০ টাকা কেজিতে। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজার অস্থির, দাম বাড়ায় বেচা-কেনা অনেকে কমেছে।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েছে। আমি এখন দেশের বাইরে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। বাংলাদেশে উল্টো সরকার কেজিতে অযৌক্তিকভাবে ৩ টাকা কমিয়েছে। আমরা তো আর লোকসান দিয়ে বিক্রি করব না। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত চিনির বাজার অস্থির থাকবে।

এদিকে হঠাৎ করে চিনির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন। বুধবার দুপুরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ট্যারিফ কমিশনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন মনিটরিং সেলের সহকারী প্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন,চিনির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে ট্যারিফ কমিশন।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সরকার খোলা বাজারে চিনির দাম ৩ টাকা কমিয়ে ১০৪ টাকা নির্ধারণ করে। এর আগে সরকার নির্ধারিত দাম ছিল ১০৭ টাকা, কিন্তু বাজারে পাওয়া যেত ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।

৬ এপ্রিল দাম কমানোর পর থেকে বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা চিনি সরবরাহ সীমিত করে দেয়। এতে চিনির দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বড় ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের চিনি কেনার সময় কোনো রসিদও দিচ্ছেন না। সর্বশেষ মঙ্গলবার বাজারে খোলা চিনি ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ১৪০ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করছে।  f

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here