খবর ৭১: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা কথা বলছেন। তারা তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছেন না, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যাচার করছেন, এটা লজ্জাজনক ।
সোমবার (১ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, শ্রমিকদের রক্ত-শ্রমের ওপর আজ সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে, অথচ আজ সেই শ্রমিকরা তিনবেলা খেতে পারছেন না। চাল, ডাল, তেল, লবণ, ডিম, ইত্যাদির মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। শহরে একটু পেলেও গ্রামে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না জনগণ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি পুলিশের আইজি বলেছেন, নির্বাচনের আগে কোনোরকম গোলযোগ বরদাস্ত করা হবে না। গোলযোগ কোথায় দেখেছেন? আজকে খুলনা সমাবেশে হামলা চালিয়ে অনেকে আহত করেছেন, গ্রেফতার করেছেন।
তিনি বলেন, তারা আরও একটি অবৈধ নির্বাচন করতে চায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মানুষকে গ্রেফতার করছে। এক রিপোর্টে দেখা গেছে, এ আইনে ৩৫ ভাগই গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিকদের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে আজ ৮ মাস ধরে আটক রাখা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আজ প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি আয় করছেন, অথচ প্রবাসীদেরই সবচেয়ে বেশি শোষণ করা হচ্ছে। এ সরকার শ্রমিকবিরোধী সরকার, কৃষকবিরোধী সরকার।
তিনি বলেন, তারা স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে, শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে পুরো দেশকে তারা আজ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা আবারও সেই একই কায়দায় নতুন করে নির্বাচন করতে চায়, কিন্তু পারবে না। এখনকার বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, এখনকার বাংলাদেশ জনগণের বাংলাদেশ। এ শ্রমিক সমাবেশের মধ্যদিয়ে নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে। অচিরেই আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন হবে।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি কাঠামো নেই, আজ দ্রব্যমূল্য শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, শ্রমিকরা আজ পেটভরে দুইবেলা খেতে পান না।
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, এ সরকার শ্রমিকের কোনো দাবিই বাস্তবায়ন করেনি, বরং অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের বেকার করে দিয়েছে। আমার নিজ এলাকা নরসিংদী ঘোড়াশালের সার কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ শ্রমিকের আয় আর বাজারে খাদ্য, দ্রব্যমূলের মধ্যে বিশাল তফাত। এ সরকারের কারণ দিনদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তাই মে দিবসের অঙ্গীকার, রুখতে হবে স্বৈরাচার।
সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান এবং আরও জুনিয়র পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকলেও স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র সদস্য রায় পুরোটা সময় সমাবেশ মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী শপু, শ্রমিক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মজুমদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে নাইটিংগেল মোড়, কাকরাইল মোড়, মালিবাগ মোড়, মৌচাক মোড় হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ কর্মসূচি ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও ছিল লক্ষণীয়।