নড়াইলে চুঁই ঝালের কদর চাহিদা থাকায় চুঁই চাষ হচ্ছে বানিজ্যিক ভাবে

0
1800

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
আঞ্চলিক ভাষায় একে চুঁই ঝাল বলে। খাদ্যের অনুসঙ্গ হিসেবে চুঁই ঝালের প্রচলন দিন দিন বাড়ছে। নড়াইলের বিভিন্ন হাট-বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিস্তারিত উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, ভালো আর্থিক মূল্য এবং ঔষধি গুন থাকায় বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে নড়াইলের বিভিন্ন গ্রামে পান পাতার মতো দেখতে লতা জাতীয় এক প্রকার এ চুঁই ঝাল গাছ। এ গাছ আম, কাঠাল, সুপারি, মেহগিনিসহ বিভিন্ন গাছে অযত্নে বেড়ে ওঠে। অনেকটা লাঠি-মোটা কঞ্চির মতো দেখতে একটি চুঁই ঝালের গাছ দুই থেকে চার বছর পর চড়া মূল্যে বিক্রয় করে চাষিরা। বিনা খরচে কিছুটা পরিচর্যা ও মাটির গুনাগুন ভেদে একটি গাছ তিন হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে নড়াইলের বোড়াবাদুরিয়া, ভাটিয়া, রতডাঙ্গা, শেখাটি, আউড়িয়া, উজিরপুর, ধোপাখোলা, দূর্গাপুর, মিঠাপুর, কালিয়া, কচুয়াবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় এ চুঁই ঝাল গাছের চাষ হচ্ছে। মাংস, ডাল, তরকারি, নিরামিষ সবজি, ডিমসহ বিভিন্ন রান্নার মধ্যে খাদ্যের জনপ্রিয় অনুসঙ্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয় এ চুঁই ঝাল। মাংসে পরিমান মতো চুঁই ঝাল ব্যবহার করলে মাংস নরম এবং যথেষ্ট স্বাদ বাড়ে। আলাদাভাবে চুঁই ভাজি খুবই উপাদেয়। রসনা বিলাসিদের কাছে খ্বু প্রিয় এ চুঁই। ঈদকে সামনে রেখে বাজারে এর প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। সদরের বোড়াবাদুরিয়া গ্রামের ডলি দাস (৩৫) বলেন, সাংসারিক কাজের ফাঁকে বাড়ি সংলগ্ন জায়গায় তিনি এই চুঁই গাছের চাষ করেন। সাধারনত চৈত্র-বৈশাখ মাসে এ গাছ লাগাতে হয়। তার ছোট মাঝারি দিয়ে প্রায় ৪০টি গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, রান্নার কাজে চুঁই এর ব্যবহার ছাড়াও ঔষধি গুন রয়েছে। ক্রেতারা বাড়ি থেকেই এ গাছ কিনে নিয়ে যায়। চুঁই বিক্রি করতে আমাদের হাটে-বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। সদর উপজেলার শেখাটি গ্রামের নির্মল বিশ্বাস (২৫) ও বিলাস রায় বলেন, দুই থেকে ৬ বছর পর এক একটি গাছ ৩ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে চোরের উপদ্রব রয়েছে। এসব গাছ একটু বড় হলে রাতের আঁধারে চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়। তারা আরও বলেন, অনেক সময় অজানা রোগে গাছ মারা যায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে ঔষধ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ এলাকার চুঁই ব্যবসায়ী তাপস রাহা ও মোশাররফ জানান, চুঁই ঝালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা বিভিন্ন গ্রামে চাষীদের কাছ থেকে ছোট-বড় চুঁই-এর গাছ কিনে এনে হাট-বাজারে বিক্রি করি। প্রতি কেজি চুঁই এক’শ টাকা থেকে বার’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ক্রেতারাও বেশী দাম-দর করেন না। কারন তারা এর মূল্য সম্পর্কে জানেন। এ ব্যাপারে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের উপাধ্যাক্ষ জীববিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফসর বরুণ কুমার বিশ্বাস জানান, রান্না করা চুঁই খাদ্যকে সুস্বাদু করে, সর্দি-কাঁশি, বাতের ব্যাথা, মা সন্তান প্রসবের পর বীষ ব্যাথাসহ যে কোনো ব্যাথা উপশম হয়। এছাড়া মাথার যন্ত্রনার জন্যও উপকারি। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, মজাদার এ চুঁই ঝাল বিভিন্ন খাদ্যের অনুসঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এর অনেক ঔষধি গুনও রয়েছে। নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় এখন চুঁই ঝালের চাষ হচ্ছে। চুঁই-এর চাষ বৃদ্ধির জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং ছত্রাক জনিত কারনে এ গাছ মারা যেতে পারে। তবে ঠিকমত পরিচর্যা করলে তা রোধ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here