খবর৭১: বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের হাত ধরে শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ জনপ্রিয়তা পায়। মানানসই ব্লাউজ শাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। যুতসই ব্লাউজ একজন নারীকে করে তুলবে আকর্ষণীয়। আবার ব্যক্তিত্বও ফুটিয়ে তুলবে। উৎসবের ধরন, সময়, শরীরের গঠন- এসব মিলিয়েই উপযুক্ত ব্লাউজ নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে।
ব্লাউজের নকশার নানা দিক আছে। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউজ আড়ংয়ের ডিজাইনার ফয়েজ হাসান এই সময়কে বলেন, ‘ফ্যাশনে সবসময়ই বৈচিত্র্য যোগ হচ্ছে। ব্লাউজের নকশা আর ধরনেও তাই পরিবর্তন আসে।’
কার জন্য কেমন ব্লাউজ? এমন প্রশ্নে ফয়েজ হাসানের ভাষ্য, ‘শাড়িতে নারীকে কতটা সুন্দর দেখাবে তার অনেকটাই নির্ভর করে শারীরিক গঠনের সঙ্গে মিল রেখে ব্লাউজ নির্বাচন। পার্টিতে স্লিভলেস ব্লাউজের জনপ্রিয়তা এখন বেশি। স্লিভলেস পরার জন্য অবশ্যই সুডৌল, মেদ ও লোমহীন হতে হবে। শাড়ির সঙ্গে অনেকে হিজাবও পরে। সেক্ষেত্রে থ্রি কোয়ার্টার বা টপস স্টাইলের ব্লাউজগুলো নিচের দিকে বাড়িয়ে নিতে হবে। শাড়ি কিংবা ব্লাউজ দুটোই জমকালো হলে বেশ বেমানান দেখাবে। যেকোনো একটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রিন্টের বাহারি নকশা আর কাটিংয়ের ব্লাউজ এখন বাজারে। তাই শরীরের গঠন যেমনই হোক না কেন নিজের সৌন্দর্যবোধ থেকেই সিদ্ধান্তে আসা উচিত কোনটায় ভালো লাগবে। আবার শাড়ি পরার উপরও শারীরিক গঠনের অনেকটা ত্রুটি ঢাকা সম্ভব। তবে ফ্যাশনেবল ও ট্রেন্ডি দেখাতে নকশা ও কাটিংয়ে ভিন্নতার সঙ্গে মানিয়ে অবশ্যই ফিটেট ব্লাউজ পরা উচিত।’
কত না বাহার!
আশির দশকে বেশ জনপ্রিয় গোল গলা, থ্রি-কোয়ার্টার, কলার গলায় ফুলস্লিভ, ঘটিহাতা, চুড়িহাতার ব্লাউজগুলো নতুন আঙ্গিকে ফিরে এসেছে। বাটনের ক্ষেত্রে রয়েছে সামনে ও পেছনে। আবার আধিপত্য আছে স্লিভলেস, কলার স্টাইল, হাই নেক, হল্টারনেক, সিঙ্গেল সোল্ডার, ব্যাকলেস চোলি, কাট-ওয়ার্ক ব্লাউজ ডিজাইন, বোট নেকসহ ভিন্ন ভিন্ন নকশা ও কাটিংয়ে।
জেনে নিন গড়ন
ঠাকুরবাড়ির মেয়েদেরও শাড়ির চেয়ে ব্লাউজের প্রাধান্য বেশি থাকত। তারা হাতা আর গলায় বাহারি লেইস লাগিয়ে নিত। কালের পরিক্রমায় সময় আর উৎসবের পরিবর্তনে ফ্যাশনের বৈচিত্র্য এসেছে। নারীর ঘরোয়া উৎসবের বাইরেও কর্মজীবনে অভ্যস্ত। প্রায়ই কোনো না কোনো উৎসব থাকেই। আর উৎসব মানেই নিজেকে উপস্থাপনের দারুণ সুযোগ।
কর্পোরেট লুক আনতে কলার স্টাইলের ব্লাউজ উত্তম। বার বি কিউ, থার্টি ফার্স্ট নাইট পার্টিতে বিশেষ করে কম বয়সীদের অনায়াসেই ব্যাকলেস চোলি এবং হল্টারনেক স্টাইলের ব্লাউজ মানিয়ে যায়। হল্টারনেক স্টাইল হলো ফিতে বক্ষ বন্ধনীর কাজ করে, তাই কাঁধের একটি বিরাট অংশ গলা ও পিঠ উন্মুক্ত থাকে। আবার ব্যাকলেস চোলির ব্লাউজেও পিঠের অনেকটা অংশ থাকে উন্মুক্ত। এ স্টাইলের ব্লাউজে পিঠটি আকর্ষণীয় হতেই হবে। যাদের কাঁধ চওড়া তাদের জন্য সিঙ্গেল সোল্ডার স্টাইলের ব্লাউজ আদর্শ। কাঁধের একক পাশটা উন্মুক্ত থাকে । যাদের শরীর একদম ফিট তাদের যেকোনো ব্লাউজ পরলেই ভালো লাগবে, আবার কাপড়ভেদে ছাপা, চেক, স্ট্রাইপ, কাতান কাপড়ের ব্লাউজ আছে। সুতির একরঙা শাড়ির সঙ্গে প্রিন্টের যে রংটি বেশি ফুটে উঠে সেই রঙের ব্লাউজ ভালো লাগবে। শাড়ি আর শরীরের গড়ন বুঝে গোলাকার, ডিম্বাকার, ইউশেপ, স্কয়ার, ভি, বক্স বিভিন্ন আকারের ব্লাউজ বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
কী হবে সাজ
ব্লাউজ আর শাড়ির রং, ধরন, উৎসব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম মিলিয়ে রাখতে হবে। ঝমকালো শাড়ি বা ব্লাউজের সঙ্গে কানের দুল না পরে গলায় ভারী গয়না পরলেই হবে। সুতি শাড়ির সঙ্গে ফ্যাশনেবল পার্স এবং ব্র্যান্ডের ঘড়ি তো থাকবেই। গয়না, হাত ব্যাগ, জুতো সবকিছু মিলিয়ে পরতে হবে।
যতনে থাকুক…
জমকালো বা খুব ভারী কাজ করা ব্লাউজ হ্যাঙ্গারে যত্নসহকারে টানিয়ে রাখা উচিত। যেগুলো ড্রাই ওয়াশের প্রয়োজন সেগুলোর নিয়ম মেনে ধুয়ে রাখতে হবে।
আয়রন করে ভাঁজ করে রাখলে কাপড়ের দাগ থেকে যায়। যথাসম্ভব টানিয়ে রাখা ভালো। বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে শুকিয়ে রাখতে হবে।
সতর্কতা
পিঠে দাগ কিংবা ফুসকুড়ি থাকলে পিঠের অনেকটা অংশ দেখা যায় এমন ব্লাউজ না পরাই ভালো। যদি পরতেই হয় তবে আগে পিঠের যত্ন নেওয়া জরুরি।
শাড়ির নকশা যেমনই হোক ব্লাউজের রংটা হবে কন্ট্রাস্ট।
স্থূলকায়া কিংবা অতিক্ষীণকায়াদের স্লিভলেস ব্লাউজ বেমানান লাগবে।
অমসৃণ পিঠে টপসকলার বা বন্ধগলার ব্লাউজ পরাই ভালো।
পরিবেশ, অনুষ্ঠান, বয়স ও রুচি অনুযায়ী ব্লাউজ পছন্দ করতে হবে।
রোজকার কর্মক্ষেত্রে মানানসই আরামদায়ক ব্লাউজ প্রয়োজন।
খবর৭১/এস: