খবর ৭১: ইউক্রেন আগ্রাসনের একবছর পার হলেও এখনো পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে পারেনি রুশ প্রশাসন। ফলে নতুন করে যুদ্ধের জন্য সেনা নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে ক্রেমলিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে এ তথ্য।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবগত ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াই দীর্ঘ হওয়া সাপেক্ষে ক্রেমলিন পুনরায় এবছর আরও ৪ লাখ সেনা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। উচ্চাভিলাষী এই নিয়োগ অভিযান ক্রেমলিনকে আরেকটি জোরপূর্বক সংহতি এড়াতে অনুমতি দেবে। বছরের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পুনঃনির্বাচিত করার প্রচারণাকেও ত্বরান্বিত করবে এটি।
সর্বশেষ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনা সংহতি ঘোষণা দেশটির জনসাধারণের আস্থাকে নাড়িয়ে দেয়। ১০ লাখের মতো রাশিয়ান দেশ ছেড়েছিলেন এ কারণে।
যুদ্ধক্ষেত্রে ও অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মাঝেও, পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি আত্মবিশ্বাসী যে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে ইউক্রেনের সমর্থকদের ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।
যদিও ক্রেমলিনের অভিজাতদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন রাশিয়া কখনও বিজয়ী হতে পারে কি না। তবে দেশটির কট্টর নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তারা এমন একটি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেটিকে তারা অস্তিত্বের লড়াই বলে মনে করেন।
ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াশিংটন ও তার মিত্রদের রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করে, এ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন অর্জন করেছেন। শি জিনপিং মস্কো সফরে সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। রাশিয়ার জন্য চীনের এই সমর্থন গুরুত্ব বহন করছে। যদিও চীন প্রকাশ্যে সরাসরি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়নি।
ইউক্রেনীয় ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, শরৎকালে মোতায়েন করা প্রায় ৩ লাখ সেনার প্রায় সবাই যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছে। যদিও সম্প্রতি রাশিয়া বড় কোনো শহর দখল করতে পারেনি।
এদিকে, ইউক্রেন, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নতুন সৈন্যদের নিয়ে এবং সরবরাহ করা ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও অন্যান্য অস্ত্রসহ আগামী মাসে বড় ধরনের পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পরিকল্পনা করছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, কিয়েভ রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলের সংযোগ সেতু ছিন্ন করার চেষ্টা করতে পারে যা এখন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
নির্ধারিত বেতনের বিনিময়ে কয়েক বছর পর্যন্ত কাজ করে এমন সেনাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে প্রচার শুরু করেছে রাশিয়া। আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য কোটা পদ্ধতি দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, এ বছর চুক্তিতে ৪ লাখ সেনা নিয়োগে আকৃষ্ট করার লক্ষ্য অবাস্তব হতে পারে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার আগে এই সংখ্যা রাশিয়ার মোট পেশাদার সৈন্য সংখ্যার প্রায় সমান।
মার্কিন থিংক ট্যাংক র্যান্ডকরপোরেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাবিষয়ক সাবেক বিশ্লেষক দারা ম্যাসিকট বলেছেন ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি মনে করি না যে তারা লোকদের যোগদানের জন্য প্রলুব্ধ করতে চলেছে। কঠোর দেশপ্রেমিক বা অর্থনৈতিক সুযোগের বাইরে থাকা লোকদের ব্যতীত।’
এটির জন্য ক্রেমলিন এখন পর্যন্ত প্রস্তুত নয়। বিশেষ করে পরবর্তী বসন্তে নির্বাচনের আগে পুতিন পঞ্চম মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করবেন। যদিও ক্রেমলিনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর শক্ত দখল রয়েছে।
স্বাধীন রাশিয়ান সামরিক বিশ্লেষক পাভেল লুজিন বলেছেন, এ বছর নতুন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত ডিসেম্বরে বলেছিলেন, রাশিয়া ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চুক্তিভিত্তিক সৈন্যের সংখ্যা ৫ লাখ ২১ হাজারে উন্নীত করবে। যে সংখ্যা ইউক্রেন আগ্রাসনের আগে ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার। এ সৈন্যরা সাধারণত তিন বছরের জন্য কাজ করে থাকে।
পুতিন গত বছরের শেষের দিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর আকার বর্তমানে ১১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১৫ লাখ বাড়ানোর একটি পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছিলেন। এটির কার্যক্রম চলবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
সূত্র: ব্লুমবার্গ