খবর ৭১: লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগির নতুন দাম নির্ধারণ করেছে উৎপাদনকারী ফার্মগুলো। নির্ধারিত এ দাম অনুযায়ী রমজান মাসে খামার পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হবে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে। ভোক্তা পর্যায়ে এ দাম কতো হবে তা এখনো নির্ধারণ করা না হলেও খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে এ মুরগির দাম। তবে ক্রেতাদের মাঝে এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা গেছে। ক্রেতারা বলেন, দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১০ টাকা কমালে লাভ কী!
শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫-২৫০ টাকা দরে। দুই-এক দিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকায়। এদিকে কিছুটা কমে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা কেজি দরে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকে, যার কারণে মুরগির চাহিদা কমে গেছে। তাই দাম কিছুটা কমেছে। ফার্ম থেকে ১৯০-১৯৫ টাকায় মুরগি বিক্রি করলেও খুচরায় ২৩০-২৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে হবে।
নাগালের বাইরেই রয়েছে গরুর মাংসের দাম। গরু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় আর আর খাসির মাংসের কেজি ১০৫০-১১০০ টাকা।
সপ্তাহের বাজার করতে আসা সামিউল হক বলেন, নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে, রোজার মাসেও মানুষ ভালো হলো না! আমরা যারা নিম্ন-আয়ের মানুষ তারা কোনো রকমে বেঁচে আছি। বেশি দামের কারণে গরুর মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছি, মুরগিও বাদ দিতে হবে। ব্রয়লারের দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১০ টাকা কমলে লাভ কী!
মাংসের বাড়তি দামের কারণে স্বল্প আয়ের অনেকেই মাছে স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানেও স্বস্তি নেই। গত রোজার শুরুতে আকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া রুই ও কাতলা এবার প্রতি কেজি ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
এদিকে ক্রমশ বেড়েই চলেছে সবজির দাম। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আলুর দাম কেজিপ্রতি ২৫ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। অতিরিক্ত দাম হাঁকানো হচ্ছে শসা ও লেবুতে। দেশি ও হাইব্রিড শসা যথাক্রমে ৮০ ও ৬০ টাকাতে বিক্রি হলেও তার দাম চাওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। লেবুর দাম প্রতি হালি ৪০ টাকা হলেও দাম হাঁকানো হচ্ছে ৬০ টাকা।
সবজি বিক্রেতারা জানান, ‘শসা আর বেগুনের দাম বেড়েছে। গতকাল বেগুন ৬০ টাকা কিনে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ পাইকারিতেই কিনেছি ৮০ টাকায়। তো ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি না করলে তো পোষাবে না। আর গতকাল ৫৫-৬০ টাকায় কেনা শসা ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ শসা পাইকারিতেই কিনতে হয়েছে ৭০ টাকায়। এখন ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করলে তো টিকতে পারবো না।’
সবজি কিনতে আসা ইকবাল মাহবুব বলেন, রোজা আসতে না আসতেই বেগুনের দাম বেড়েছে। বেগুনের দাম না কমলে এবার বেগুনিই খাবো না!
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট ও পণ্য আমদানি বন্ধসহ নানা অজুহাতে রমজানে চাহিদার শীর্ষে থাকা খাদ্যদ্রব্যের দাম কয়েক দফায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এদিকে বাড়তি দামের বোঝা বইতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় নিম্নআয়ের মানুষদের।
রমজানকে কেন্দ্র করে বেড়েছে মুদি পণ্যের দাম। বাজারভেদে প্রতি কেজি ছোলা ৯০-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এংকার ডাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, মাসকলাইয়ের ডাল ১৫০ টাকা, মুগডাল ১১০ টাকা। তবে গত সপ্তাহের মতো এবারো স্থিতিশীল রয়েছে ছোলা ও বেসনের দাম।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
অভিযানের শুরুতে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজানে কিছু বিশেষ সবজির দাম বেড়ে যায়। সে বিষয়ে আমরা আজকে তদারকি করবো। এছাড়া মুদি সামগ্রী ও মুরগির নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করবো।