খবর৭১ঃ
বন্যা এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করাসহ আট প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেই সঙ্গে আরও চার প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১৬৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮ হাজার ৯১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড.কাউসার আহাম্মদ, পরকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকি, একেএম ফজলুল হক প্রমুখ।
বিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, একনেক বৈঠকে বরাবরের মতোই প্রধানমন্ত্রীর সামনে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এ কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি কমছে। বিশেষ করে হতদরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি ও টিসিবির পণ্য বিক্রির কারণে মূল্যষ্ফীতির চাপ কমে এসেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, সরকারের নানা প্রণোদনামূলক কর্মসূচি ও নীতিকৌশলের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। বিলাস পণ্যের রাশ টেনে ধরায় আমদানি ব্যয় কমেছে এবং রপ্তানি বেড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ভুতর্কি ব্যয় মেটাতে সরকারি ঋণ বাড়লেও বেসরকারি খাতে জানুয়ারি মাসে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১৩ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ। সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, যা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া জুলাই-জানুয়ারি মাসে চলতি এ্যকাউন্টে ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। এভাবে অর্থনীতি বেশ কিছু সুচকের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর অন্যতম ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাসট্রাকটার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভারনাবিলিটি রিডাকশন প্রজেক্ট (রিভার)’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের সহজ শর্তের তহবিল ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে ঋণ দেবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। বাকি ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থাণীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এটির আওতায় ৫০০টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, অ্যাকসেস রাস্তা এবং জলবায়ূ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে নদী ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিস্টরা।
স্বাভাবিক সময় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এসব অবকাঠামোতে সৌরশক্তি ব্যবস্থা, পানি, স্যানিটেশন এবং নানান স্বাস্থ্য সুবিধা থাকবে। নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।
অন্যান্য অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন-গ্রিড সম্প্রসারণ, প্রমোটিং জেন্ডার রেসপন্সিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টিভিইটি সিস্টেমস এবং কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। আরও আছে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি): প্রজেক্ট কো অর্ডিনেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট, দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন (এসডিআরডি), ময়মনসিংহ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন ও নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।
ব্যয় ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো চার প্রকল্প হলো- জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিপ মডেল টেস্টিং সেন্টার স্থাপন, গোপালগঞ্জ এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন এবং খুলনা হতে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।