প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াচ্ছে চীন

0
123

খবর৭১ঃ
তাইওয়ান ইস্যুতে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো ফুঁসছে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। বেইজিং অঞ্চলটিকে তার নিজস্ব ভূখণ্ড অংশ হিসাবে দেখে। আর সেখানে গায়ে পড়ে নাক গলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের নিষেধ সত্ত্বেও গণতন্ত্র-সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে উসকানি দিচ্ছে। অস্ত্র বিক্রি করছে। আর এতেই ক্ষেপে বাঘ হয়ে গেছে চীন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রোববার নতুন অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দিল চীন। আইন সভা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) বার্ষিক অধিবেশনের অভিষেক দিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরে তাদের সামরিক খাতের ব্যয় ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১.৫৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ২২৫ বিলিয়ন ডলারে। এএফপি, সিএনএন।

রোববার বেইজিং গ্রেট হলে বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধনের সময় চীনের বিদায়ি প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং বলেন, নতুন বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে চীন। মহামারি-পরবর্তী সময়ে নিজেদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায় দেশটি। অধিবেশনে তিন হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। পৃথক এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনকে দমন করার এবং ধারণ করার বহিরাগত প্রচেষ্টা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বেইজিং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষার আধুনিকীকরণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। দেশটির বিশাল সামরিক বাহিনীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বমানের বাহিনীতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে।

Advertisement

শুধু তাইওয়ানই নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য ও হংকং ইস্যুতেও কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বলয়ের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে দেশটির। উভয়পক্ষই মাঝে মধ্যে সামরিক মহড়ার আয়োজন করছে অঞ্চল দুটিতে। ফলে এই বছর যে দেশটির সামরিক ব্যয় কিছুটা হলেও বাড়ানো হবে তা বোঝাই যাচ্ছিল। সামরিক ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কেছিয়াং লি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ, প্রস্তুতি জোরদার, নতুন সামরিক কৌশলগত দিকনির্দেশনা তৈরি, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণের জন্য আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ এবং সব দিক সামরিক কাজকে শক্তিশালী করার জন্য সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা করা উচিত।

প্রবৃদ্ধির বিষয়ে লি কেছিয়াং বলেন, করোনা মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে তার দেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়াও আরও বেশি প্রবৃদ্ধির জন্য বিপুল সম্ভাবনা ও গতি বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। কেছিয়াং জানান, চীন গত বছর এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করেছে, যা শহরে বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। বুধবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য দেখায় যে, চীনের কারখানাগুলো ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১১ বছরের মধ্যে তাদের সেরা উৎপাদন লক্ষ্য পূরণ করেছে, যা কোভিড ঢেউ শেষ হওয়ার পরে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কত দ্রুত ফিরে এসেছে তা পরিলক্ষিত করে। পরিষেবা এবং নির্মাণশিল্পগুলোও দুই বছরে তাদের সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। চীনের মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস তখন থেকে ২০২৩ এবং ২০২৪ উভয়ের জন্য দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫%-এ উন্নীত করেছে, যা পূর্বে ৪% থেকে বেড়েছে। এ ছাড়াও বিশ্লেষকরা বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে চীনের জন্য পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা রোববার ঘোষিত ২০২৩ সালে ৫% প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায়ও প্রতিফলিত হতে পারে। রাশিয়ার যুদ্ধের কারণেও বৈশ্বিক অর্থনীতি এই বছর আরও দুর্বল হবে মনে করছেন তারা। আগামী মঙ্গলবার এই বছরের প্রথম দুই মাসের জন্য আমদানি ও রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করবে দেশটি, যা কংগ্রেস চলাকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নতুন অর্থনৈতিক দল, বিভিন্ন মন্ত্রী এবং আর্থিক প্রধানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে উন্মোচন করা হবে। এটি বিশ্ববাণিজ্যের ওপর তাদের চাহিদার একটি আভাস দেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here