খবর৭১: নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দীর্ঘ ৩৮ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠক শেষে স্বাক্ষরিত হলো ঐতিহাসিক সমুদ্র চুক্তি।
এতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে যেকোনো মূল্যে বিশ্বের গভীর সমুদ্র অঞ্চলের প্রকৃতির ৩০ শতাংশ বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে অর্ধেক পৃথিবী তলিয়ে যাওয়া রোধে অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ গ্রহণে শনিবার এ আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়ায় স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। গভীর সমুদ্র এবং এর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এমন চুক্তি এই প্রথম। এর আগে প্রায় এক দশক ধরে অর্থায়ন এবং সমুদ্রে মাছ ধরার অধিকারের বিষয়টি নিয়ে মতানৈক্যের কারণে চুক্তিটি ঝুলে ছিল। সর্বশেষ ৪০ বছর আগে ইউএন কনভেনশন ‘অন দ্য ল অব দ্য সি’ স্বাক্ষর হয়েছিল ১৯৮২ সালে।
সম্মেলনের সভাপতি রেনা লি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রোববার প্রতিনিধিদের সামনে দীর্ঘ করতালির মধ্যে উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছেছে।’ খসড়াটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে ১৫ বছরেরও বেশি আলোচনার পর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসাবে পরিবেশবাদীরা এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। গ্রিনপিসের লরা মেলার বলেন, এটি সংরক্ষণের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিক। একটি বিভক্ত বিশ্বের ভূ-রাজনীতি সত্ত্বেও প্রকৃতি এবং মানুষের সুরক্ষার প্রচেষ্টা বিজয়ী হতে পারে, এটি তার একটি নজির।
শুক্রবার থেকে শনিবার রাতভর ম্যারাথন সেশনসহ দুই সপ্তাহের ব্যাপক আলোচনার পর প্রতিনিধিরা একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। লি আলোচকদের বলেছেন, ‘এ নিয়ে পুনরায় কোনো আলোচনা হবে না।’ তিনি ঘোষণা করেন, আইনজীবীদের দ্বারা যাচাই এবং জাতিসংঘের ছয়টি অফিসিয়াল ভাষায় অনুবাদ করার পরে চুক্তিটি পরবর্তী তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস প্রতিনিধিদের প্রশংসা করেছেন। এক মুখপাত্র বলেন, চুক্তিটি ‘বহুপাক্ষিকতার বিজয় এবং বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য সমুদ্রের বিপন্নতার মুখোমুখি হওয়ার ধ্বংসাত্মক প্রবণতা মোকাবিলায় এই বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা একটি স্মরণীয় ঘটনা।’ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) সর্বশেষ মূল্যায়ন অনুসারে, বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্রজাতির প্রায় ১০ শতাংশই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। নতুন চুক্তি অনুসারে ৩০ শতাংশ গভীর সমুদ্র অঞ্চল সংরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি সমুদ্রে মাছ ধরা, জাহাজ চলাচল এবং বিভিন্ন ধরনের অভিযান ও খননও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হবে।