খবর৭১: অর্ডুয়াস মার্চ’-খ্যাত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা এখনো ভোলেনি উত্তর কোরিয়া। ১৯৯০-এর দশকের সেই দুর্ঘটনায় অনাহারে প্রাণ হারিয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। একই ভয়ে ভীত দেশটির জনগণ।
দিন দিন খাদ্য ঘাটতি চরম আকার ধারণ করছে। বিশ্ব বিচ্ছিন্ন দেশটিতে আবারও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর সিএনএনের।
বিশেষজ্ঞদের মতে ’৯০-এর দশকের দুর্ভিক্ষের পর থেকে দেশটি সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে পৌঁছেছে। অনাহারে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
পিটারসন ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিশ্লেষক লুকাস রেঙ্গিফো-কেলার জানান, উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সরবরাহ ‘ন্যূনতম মানব চাহিদা’ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয়তার অনেক নিচে নেমে গেছে।
তিনি জানান, ‘খাদ্য সম-বিতরণও উত্তর কোরিয়ায় অকল্পনীয়। সেখানেও অভিজাত এবং সামরিক ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। তবুও যদি কোনো দিন সুষ্ঠু বিতরণ সম্ভব হয় তবুও সংকটে আপনাকে ক্ষুধায় মরতে হবে।’
এমন মূল্যায়নের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি সিউল ঘোষণা করেছে, তাদের ধারণা উ. কোরিয়ার কিছু অঞ্চলে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। যদিও বিশ্বের সঙ্গে দেশটির বিচ্ছিন্নতার কারণে এই দাবির শক্ত প্রমাণ সংগ্রহ দুরূহ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুসারে, করোনা মহামারির আগেও উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই অপুষ্টিতে ভুগছিল। তিন বছরের বন্ধ সীমান্ত-বিচ্ছিন্নতা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতায় বোঝা যায় উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উন ওয়ার্কার্স পার্টির বৈঠকের বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন দেশের কৃষি খাতের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনার কথা। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং কৃষিতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সমস্যার জন্য পিয়ংইয়ং নিজেই দায়ী। মহামারি চলাকালীন পিয়ংইয়ং তার বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা বাড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে তার সীমান্তের ৩০০ কিলোমিটার বরাবর দ্বিতীয় স্তরের বেড়া তৈরি করেছে। গত বছর রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর জন্য মূল্যবান সম্পদ ব্যয় করেছে।
একজন সিনিয়র গবেষক লিনা ইউন বলেন, ‘২০২০ সালের আগস্টে সীমান্তে দৃশ্যমান গুলি চালানো হয়েছে, ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ওপর অবরোধ টানা হয়েছে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে চীন প্রায় ৫৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম গম, মসলিনের আটা এবং ৫৩ হাজার ২৮০ কেজি সিরিয়াল শস্য উত্তর কোরিয়ায় রপ্তানি করেছে। কিন্তু পিয়ংইয়ং হঠাৎ করেই অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়।