খবর৭১ঃ
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পুরো একটি বছর পার হয়ে গেল। যুদ্ধ ইউক্রেনে হলেও এর ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বেই। বিশেষ করে ইউক্রেনের কাছের প্রতিবেশী পোল্যান্ড, মলদোভা, রোমানিয়া। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের প্রতিবেশী মলদোভা।
সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আতঙ্কও। দেশটির শহর-গ্রাম থেকে শুরু করে প্রত্যেক নাগরিকের ভেতরেই ঢুকে গেছে ‘রুশ ভয়’। ইউক্রেনের পরেই রাশিয়ার পরবর্তী টার্গেট মলদোভা-তরুণ-যুবক, শিশু-বৃদ্ধ সবার মুখেই একই কথা। ওয়াল স্ট্র্রিট জার্নাল।
রাশিয়াকে ঘিরে পশ্চিমা গোষ্ঠীর নতুন অভিযোগ, মলদোভার চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করার জন্য উত্তেজনা বাড়াচ্ছে মস্কো। অশান্তি সৃষ্টির জন্য বেসামরিক ছদ্মবেশে ‘বিনাশকারীদের’ ব্যবহার করছে।
রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়াকে ক্রিমিয়ার মতো সংযুক্ত করার পরিকল্পনায় দেশটিতে অভ্যুত্থান সৃষ্টির ভিত্তি স্থাপনের পাঁয়তারা করছে। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এসব ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
পশ্চিমের যুক্তি, মলদোভা নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বর্তমান পদক্ষেপগুলো গত বছর ইউক্রেনে আগ্রাসনের আগের পটভূমির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। ইউক্রেনের বন্দরনগরীগুলোর মতোই মলদোভায় রাশিয়ার মূল আকর্ষণ ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চল। সিএনএন।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো অভিযোগ আনেন। বলেন, তার দেশের পশ্চিমাপন্থি সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছে মস্কো। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চলছে।
আরও বলেন, মলদোভায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময়কালে অশান্তি সৃষ্টির জন্য রাশিয়া বেসামরিক ছদ্মবেশে নাশকতাকারী ব্যবহার করছে।
রাজধানী চিসিনাউতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিরোধী বিক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করে মলদোভার কর্মকর্তারা জানান, ‘রাশিয়া দেশটিতে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টায় উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তারা একটি অভ্যুত্থান ঘটাতে চাইছেন যা দেশকে ক্রেমলিনের যুদ্ধে টেনে নিয়ে যেতে পারে। মলদোভার রাশিয়াপন্থি অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়া। যেখানে মস্কোর একটি সামরিক অঞ্চল রয়েছে।
এ কারণেই ভয় আরও শেকড় ছাড়ছে। মলদোভার বিশ্বাস, ট্রান্সনিস্ট্রিয়াকে নিজ ভূখণ্ডভুক্ত করতেই এই কূটচাল শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গত সপ্তাহে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ সফরের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট সান্দুর সঙ্গেও দেখা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউজ বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন মলদোভার ‘সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
মলদোভায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রতিবাদে ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভে নামে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গর্জে ওঠা ওই জনঅসন্তোষে রাশিয়ার হাত আছে বলেও মন্তব্য করেছেন সান্দু। তার চার দিন আগেই পদত্যাগ করেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাতালিয়া গ্রাভ্রিলিতা (পশ্চিমাপন্থি)। নতুন প্রধানমন্ত্রী ডরিন রিসেনও (১৬ ফেব্রুয়ারি অভিষেক) পশ্চিমাপন্থি মনোভাব অব্যাহত রেখেছেন।
সান্দু সরাসরি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া পরিস্থিতির সুবিধা নিতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, নাশকতাকারীদের সাথে জড়িতরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বেসামরিক লোকের ছদ্মবেশে সহিংস কর্মকাণ্ড, সরকারি ভবনে হামলা ও জিম্মি করছে।
তার দাবি, তথাকথিত বিরোধী হিসাবে ছদ্মবেশী ব্যক্তিরা, হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।