খবর ৭১: গত ৯ ডিসেম্বর মধ্য রাতে আটক হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ সাহেবের সঙ্গে এবার একসঙ্গে জেলে ছিলাম। উনি ছিলেন এক বিল্ডিংয়ে আর আমার ছিলাম অন্য বিল্ডিংয়ে। এরপর আমাদের ডিভিশনে দিয়েছে আর উনাকে হাসপাতালে দিয়েছে। কিন্তু, এবার প্রচণ্ড বেশি নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতনের কথা আমরা বলতে চাই না। নির্যাতন হবেই, সেটা আমরা জানি। কারণ আমরা সত্যের পথে আছি, গণতন্ত্রের পথে আছি।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্যাতন তারা করবে, নির্যাতন করেই তারা টিকে আছে। এজন্য তাদেরকে সরাতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রধান কাজ। এজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার তারা সবাই অনেক কষ্টে আছে।
তিনি বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি টিসিবির লাইনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের প্রোটিন দিতে হয়, এজন্য প্রতিদিন তাদের অন্তত একটি করে ডিম খেতে দিতে হয়। সেই ডিম এখন ছোঁয়া যায় না। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির দামও কেজি প্রতিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, চিনির দাম বেড়েছে, লবণের দামও বেড়েছে। শহরগুলোতে বাসা ভাড়া বেড়েছে। লোকজন এখন বাধ্য হয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠানো অসম্ভব হয়ে গেছে। সবকিছুর ব্যয় বেড়ে বহুগুণ হয়ে গেছে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘এত উন্নয়ন করছি তারপরেও এত চিৎকার করে কেন?’ উন্নয়ন করছেন মূলত আপনাদের নিজেদের। আপনাদের যারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও দলের পৃষ্ঠপোষকতায় আছে তাদের উন্নয়ন করছেন। ইতোমধ্যে তাদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।
বাম দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমন একটা পার্লামেন্ট বানানো হয়েছে, যে পার্লামেন্টের কখনো নির্বাচন হয় না। আমাদের কয়েকজন সেই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে চলে এসেছেন। ২০১৪ সালেও তারা (আওয়ামী লীগ) একইভাবে নির্বাচন করেছিল। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আমাদের বেশ কিছু লোকজন বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ডুগডুগি বাজিয়ে সেখানে যোগদান করল। আমাদের অনেক বাম নেতা, এক সময়কার প্রখ্যাত নেতা, যারা অনেক বড় বড় কথা বলেন এখনও। তারাও সেদিন নৌকার সঙ্গে মহাজোট করে সেই নির্বাচনে চলে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, এখন তাদের আবার একটু অসুবিধা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব দেয়নি, যে কারণে ভাগ-বাটোয়ারা ঠিকমতো হচ্ছে না। এখন বলছে, ১৪ দল কাজ করে না। তাদের সঙ্গে কথা রাখা হয়নি। এরা আওয়ামী লীগের চেয়েও খারাপ। আজকে এই দেশে কয়েকটি দল তৈরি হয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে তাবেদারি করা ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এই বিএনপি নেতা বলেন, আপনারা জনগণের অসুখের দিকে তাকান। জনগণের অসুখ একটাই, তারা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নেই। তাই কেউ জনগণের কথা বলতে পারে না। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি করা যাবে না। কারণ সংবিধানে নেই। তোমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলে, তখন কি সংবিধানে ছিল? ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন জনগণ এটা চায়, এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে। তখন তিনি পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাশ করে সংবিধানে সংযোজন করেছেন। তারপর তার অধীনে নির্বাচন হয়েছে।
তাঁতী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাঁতীদের বাঁচিয়ে রাখা ও তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জিয়াউর রহমান তাঁতী দল তৈরি করেছিলেন। এখন যারা তাঁতী দল করছেন তাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আপনারা আপনাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুন। কীভাবে তাঁতীদের বাঁচিয়ে রাখবেন, কীভাবে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবেন সেই বিষয় নিয়ে কাজ করবেন। শুধু মূল দলের সঙ্গে রাস্তায় নেমে স্লোগান দিলে কাজ হবে না। আপনাদেরকে তাঁতীদের জন্য কাজ করতে হবে। তাতে করে তাঁতীরা আপনাদের সঙ্গে বেশি বেশি সম্পৃক্ত হবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ও সদস্য সচিব হাজী মুজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।