মোঃ আব্দুল হালিম,ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা ঃ গোয়াল ঘরে শিয়ালে খুবলে খাওয়া শতবর্ষী সেই বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছা বৃহস্পতিবার ভোরে মেজ ছেলের বাড়ি কাঠবল্লা গ্রামে মারাগেছেন। বাদ জহুর মুক্তাগাছা উপজেলা কাঠবল্লা গ্রামে মতিন হাজীর বাড়ির মসজিদের সামনে জানাযা নামাজ শেষে কমলাপুর গ্রামে তার পিতার বাড়ি সামাজিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফদার দাফন কাফনের জন্য আর্থিক সহযোগীতা করেছেন। গত সোমবার সেই বৃদ্ধা মা মরিয়ন নেছার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাপড় চোপর,নগদ টাকাসহ ঈদ সামগ্রী দেন তার ছোট ছেলের কাছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের তেজপুাটুলি গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম নেছা (৯৮)। ৫ সন্তানের জননী। ১৯৭৫ সালে মারা যায় তার স্বামী। এরপরও কপালে জুটেনি বিধবা ও বয়স্ক ভাতা। স্বামীর ভিটায় নিজের বসত ঘর না থাকায় বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছা ঠাই হয়েছিল ছোট ছেলে মারফত আলীর ঘরের খোলা বারান্দায়। অসুস্থ্য ও বয়সের ভারে প্রকৃতির কাজ ঘরের বারান্দায় সারার কারনে বৃদ্ধা মা’কে ভাঙ্গা গোয়াল ঘরে গরুর পাশে রেখে আসেন ছেলে ও তার স্ত্রী ! সেই ঘোয়াল ঘরেই শেয়ালে খুবলে খায় বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছাকে। বৃদ্ধা মায়ের কান্নায় ঘর থেকে উঠে আসেনি পুত্র ও পুত্রবধুঁ। বৃদ্ধার চিৎকারের আশপাশের বাড়ি থেকে মানুষ উঠে এসে তাকে রক্ষা করে। ততক্ষণে শিয়াল বৃদ্ধার পায়ের মাংস অনেকটা কামড়িয়ে খেয়ে ফেলে।
এঘটনায় গত ২৯ মে বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশ বিদেশে। গোয়াল ঘরে বৃদ্ধা মায়ের ছবিটি ভাইরাল হয়েযায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসাসহ অর্থনৈতিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে ছিলেন।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ঐদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফদার সকাল দশটায় বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করান। বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রৌওশন এরশাদ এমপি বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসাসহ সকল দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ফুলবাড়ীয়া পাঠান মুক্তাগাছা উপজেলার সংসদ সদস্য সালা উদ্দিন মুক্তিকে। ততক্ষণে হাসপতালে ছুটে যান ফুলবাড়ীয়ার স্থানীয় আ’লীগের দলীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ মোসলেম উদ্দিন। এসময় বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা সহ সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃদ্ধা মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঐ দিনই দ্রুত তাকে নেওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপতালে। সমাজ সেবা অদিধপ্তরের তত্বাবধায়নে প্রায় একমাস চিকিৎসা শেষে গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাকে। ময়মনিসংহ মেডিকেল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শতবর্ষী বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসাসহ শারীরিক খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসা শেষে বাড়ীতে আসার প্রায় আড়াই মাস পর বৃহস্পতিবার মারা গেলেন বৃদ্ধা মরিয়ম নেছা। তার কথা মতোই তাকে দাফন করা হয়েছে তার জন্মস্থান কমলাপুর গ্রামে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফদার বলেন, বৃদ্ধা মরিয়ম নেছার দাফন কাফনের জন্য সকালেই আর্থিক সহযোগীতা পাঠানো হয়েছে, গত সোমবার শতবর্ষী বৃদ্ধা মায়ের জন্য কাপড় চোপড়,নগদ টাকা ও ঈদ সামগ্রী দিয়েছিলাম কিন্তু তা আর ঈদে পরতে পারলেনা, এর আগেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলেগেলেন, কোন সন্তান যেন মা বাবাকে এমন ভাবে কষ্ট না দেয়।