মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর :
ঘরের আসবাবপত্র, পড়নের পোষাক ও বইপত্র আগুনে পুড়ে যাওয়ায় নির্বাক হয়ে পড়েছে নওশিন আকতার। পাঁচ সদস্যের পরিবারটির ভরণপোষনের দায়িত্বে থাকা মেয়েটির চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ। আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া বাড়িটি নির্মাণ করার অর্থযোগাড় করাসহ বইপত্র কিনে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাঁর।
গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের কর্ণেল তাহের রোড মুন্সিপাড়া এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। এতে সৈয়দপুর, নীলফামারী, তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট দুই ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এরই মধ্যে পুড়ে যায় ওই এলাকার বাড়িঘরসহ ৫টি পরিবারের সর্বস্ব। ওইসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে বৃদ্ধ কায়সার আলীর মেয়ে নওশিন আকতার। আগুনে পুড়ে গেছে বাড়ির আসবাবপত্রসহ জামা-কাপড় ও তাঁর পড়ার বইপত্র। গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে কথা হয় কলেজ ছাত্রী নওশিনের সাথে। রংপুর মডেল কলেজের সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ালেখা করে সে। পড়াশোনার পাশাপাশি সৈয়দপুর শহরের ‘রেড চিলি’ নামের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার হিসেবে পার্ট টাইম চাকুরী করে। ওই চাকুরির প্রাপ্ত বেতন দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা ও আরো দুই বোনসহ ৫ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষন করে থাকে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে নওশিন জানায়, সামনে রমজানের পর তার বড় বোন চাঁদনী আকতারের বিয়ে। বোনের বিয়ের জন্য জমানো বেশকিছু টাকাও পুড়ে গেছে। এতে বাবা-মা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। এদিকে জামা-কাপড় ও আসবাবপত্রের সাথে বইপত্র পুড়ে যাওয়ায় খুব কষ্ট পাচ্ছি। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। বাসা মেরামত করার মতো টাকা নেই আমার হাতে, সেখানে বইপত্র কেনা এবং বাসযোগে সৈয়দপুর থেকে রংপুরে যাওয়া-আসা করা আর সম্ভব নয়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নওশিন বলেন,হয়তো লেখাপড়াই ছেড়ে দিতে হবে অবশেষে।
সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টাফ কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুন্সিপাড়াস্থ পরিত্যক্ত রেলওয়ে কোয়ার্টারে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। ধারনা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সাকিট থেকে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে যায় ৫টি পরিবারের সম্পুন্ন মালামাল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোয়াটারের আরো বেশ কয়েকটি পরিবার।
সৈয়দপুর পৌরসভার কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম জানান, আগুনের সূত্রপাত হয় জনৈক জাহেদা বেগমের বাড়ি থেকে। খবর পেয়ে সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসসহ নীলফামারী, উত্তরা ইপিজেড ও রংপুরের তারাগঞ্জে ছয়টি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে পুড়ে যায় জাহেদা বেগম, আরবি হোসেন, উকিল আহমেদ, শরফরাজ আলী ও শাহিন হোসেনের বাসার সম্পুন্ন মালামাল। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি তাঁদের প্রায় কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এদিকে খবর পেয়ে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে তাৎক্ষণিক অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, পৌরসভা মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবি ও উপজেলা প্রশাসন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান জানান, চাঁদনীর বিয়ে ও নওশিনের পড়াশোনা চালানোর বিষয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।