খবর ৭১: সংকটে পড়েছে দেশের বেকারত্ব ঘুচিয়ে এগিয়ে যাওয়া পোলট্রি শিল্প। পোলট্রি খাবার, বাচ্চার অধিক দাম, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং সিন্ডিকেটের কারণে আগামীতে এ শিল্প চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
নানা সংকটের কারণে ছোট ছোট খামার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা ব্যবসা করতে পারছিনা। করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। পোলট্রি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় টিকতে না পেরে এরই মধ্যে খামার গুটিয়েছেন বহু উদ্যোক্তা। গত এক বছরে পোলট্রি খামার কমে গেছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার। ফলে উৎপাদন কমে তৈরি হচ্ছে সরবরাহ ঘাটতি, যার প্রভাবে এরই মধ্যে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। যার সুবিধা নিচ্ছে এ খাতে করপোরেট ব্যবসায়ীরা। এমনটাই দাবি প্রান্তিক খামারিদের।
এ শিল্পে অস্থিরতার কারণে ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০৫ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। এ দামের লাগাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় প্রতিনিয়ত মুরগির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার দাউদকান্দির পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. শাহিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক মাস আগে মুরগির বাজার পড়ে যায়, উৎপাদনের চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়া অনেক খামারি বাচ্চা তুলেননি খামারে। এতে করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।
সামনে রমজান মাস, এ সময় পোলট্রির চাহিদা রয়েছে; প্রান্তিক খামারিরা বাচ্চা নিচ্ছেন এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করেই ১০ থেকে ১২ টাকা দামের ব্রয়লারের বাচ্চা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন ঢাকা জেলার প্রান্তিক খামারি নূর ইসলাম। তিনি বলেন, মুরগি এবং ডিমের দাম সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এতে করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসায়ে আশার আলো দেখবেন। শুধু তাই নয় দাম নির্ধারণ হলে বেকারত্ব অনেকাংশে কমবে বলে তিনি মনে করেন।
ব্রয়লারের মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ার কারণে দোকানিদের সঙ্গে ক্রেতাদের চলছে তর্কবিতর্ক। বিক্রেতারা বলছেন দাম বাড়ার কারণে মুরগি আনা কমিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি কমেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মিরপুরের মুরগি বিক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, আগে যেখানে দিনে ২০০ কেজি মুরগি বিক্রি করতাম, সেখানে এখন ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মুরগি বিক্রি করছি। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে বিক্রি আরও কমবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ব্রয়লারের বাজার আরও অস্থির হবে বলে মনে করেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি একটি ব্রয়লারের বাচ্চার দাম ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা। আজ এটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। মুরগির বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ইচ্ছা করেই অস্থিরতা তৈরি করছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের উদ্যোগে গত নভেম্বরে মুরগির খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও রেডি মুরগি বেচাকেনা এবং দাম সংক্রান্ত বিষয়ে একটি কৌশলপত্র নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে। এ ব্যাপারে আমরা মতামত দিয়েছি। ৫ ডিসেম্বর এ কৌশলপত্র প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে অধিদপ্তর কৌশলপত্র করছে না। এটি করা হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। শুধু তাই নয় পোলট্রি শিল্প নিয়ে চারটি নীতিমালা থাকলেও একটিও বাস্তবায়ন এখনও হয়নি।
বিপিএ’র সভাপতি বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুরগির খামারের সঙ্গে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অবহেলায় আজ পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের পথে। অধিদপ্তর কর্পোরেটদের সব সময় সহযোগিতা করছে অথচ প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেক। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্ব এ শিল্পকে রক্ষা করা। প্রাণিসম্পদের সহযোগিতায় কর্পোরেটরা আরও বড় হচ্ছে আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকার সকল সুযোগ সুবিধা দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিগণ অবহেলিত। প্রান্তিক খামারিদের কথা চিন্তা করে হলেও সরকারের উচিত এ ব্যবসায় সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে করে প্রান্তিক খামারিরা বড় লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পান এবং এ ব্যবসায় তারা টিকে থাকতে পারেন।