খবর৭১: রাজধানীর উত্তরার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মা-মেয়েসহ তিনজনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে তাদের উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনজনকে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃতরা হলেন- শাফানা আফিফা শ্যামী (৩৫) ও তার যমজ মেয়ে আয়েশা (১০) ও ফাতেমা (১০)। তারা সবাই ওই ফ্ল্যাটে থাকেন।
জানা গেছে, পারিবারিক অভিমানকে কেন্দ্র করে শাফানা আফিফা শ্যামী নামে ওই গৃহবধূ গত কয়েক দিন ধরে দুই মেয়েকে নিয়ে নিজেকে ফ্ল্যাটের ভেতর আবদ্ধ করে রাখেন। এতে রান্নাবান্না ও খাওয়া-দাওয়া না করায় (অনাহারে) তারা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেন। ভোরে পুলিশ আসে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে অচেতন অবস্থায় মা-মেয়েসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। ফ্ল্যাটের ভেতর ভিকটিমরা মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। অনাহারে থাকায় তাদের এ অবস্থা হয়েছে। ভিকটিমদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভবন কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধি জানান, শাফানা আফিফা শ্যামী নামে ওই নারী পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে ওই ফ্ল্যাটটির মালিক। দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটটিতে তিনি বসবাস করে আসছেন। ভাইদের সঙ্গে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে তার মতবিরোধ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এতে আর্থিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত হন তিনি। নিজ ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি বিলসহ কয়েক মাসের সার্ভিস চার্জ পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি।
এদিকে ওই নারীর স্বজনদের দাবি, আফিফা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কারো কথা না শোনায় স্বজনদের কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন না।
আফিফার ভাই তারকিন আহমেদ জানান, সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। কোনো মানুষকেই সে বিশ্বাস করতে পারে না। শুনেছি ও অসুস্থ হয়েছে। ঢাকার বাইরে আমার কাজ থাকায় আমি দেখতে যেতে পারিনি। তবে আমার অন্য ভাইদের বিষয়টি জানিয়েছি।
বিকালে উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি ওয়ার্ডে দুই কন্যা সন্তানসহ ওই নারীর চিকিৎসা চলছে। আয়েশা ও ফাতেমা নামে তার দুই অবুঝ সন্তান ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করছে। কথা বলতে চাইলে ওই নারী শুধুই কান্না করছে। স্বজনদের কেউই এখন পর্যন্ত তাকে দেখতে আসেনি।