খবর৭১ঃ সাত মাস আগে (২০২১ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে) গীতিকার মহসিন মেহেদীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। এটি এই গায়িকার তৃতীয়বারের মতো বিয়ে।কিন্তু এ সংসারেও ভালো নেই তিনি।কষ্ট, রাগ আর সাংসারিক তৃক্ততা নিজেই ভক্তদের জানিয়েছেন ন্যানসি।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এসব কথা জানিয়েছেন ন্যানসি। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।’
ন্যানসি লেখেন, ‘আমার আর মেহেদীর সংসার জীবনের বয়স সাত মাস। এদিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাদের দু’জনের জন্যই নতুন করে অল্প দিনের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জীবনসঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত টুকু নেওয়া কঠিন ছিল। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়া যেন আনন্দের চাইতেও দ্বিগুণ ভীতি। আমার দুই ভাই, ভাবী এবং রোদেলা বাদে দুই পরিবারের কোনও সদস্যদের নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে নেই কোনও উচ্ছ্বাস, উল্টো রয়েছে বিদ্রূপ মেশানো হতাশা।’
তিনি লেখেন, ‘নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে অর্থ বা সম্পদ বণ্টনে কে কী পাবে আর কী হারাবে সে সব নিয়ে রয়েছে চুলচেরা হিসাব! আমি নিজেও যেন ভাবতে বসলাম, আচমকাই গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। মনে হলো স্বস্তি খুঁজতে গিয়ে অশান্তিকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলাম। বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।’
সংসার জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছেন উল্লেখ করে ফেসবুকে এই গায়িকা লেখেন, ‘দুজনই ভালোবেসে যার হাত ধরেছিলাম সেটা যে কোনো কারণেই হোক, শেষ পর্যন্ত টেকাতে পারিনি। আমাদের জীবন চলায় ব্যর্থতার তকমা অনেক জুটেছে। এখন দুজন-দুজনের কাছে ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী হওয়ার চাইতেও আস্থার হয়ে ওঠাটাই যেন বড় পরীক্ষা! আর প্রতিদিনকার জীবন যাপন করার প্রক্রিয়া দুজনের এতটাই ভিন্ন যে সেটা রপ্ত করাটাও বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার! খাওয়া, ঘুমানো, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করার ভঙ্গি, নিত্যদিনের কথা বলা, মতপ্রকাশ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, কাছে আসা- এর সবই যেন নতুন করে শেখার বিষয়! মনে হলো অল্প দিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি।’
স্ট্যাটাসে বর্তমান স্বামী মেহেদীর ও নিজের আগের সংসারের সন্তানদের বিষয় ন্যানসি লেখেন, ‘মেহেদীর দুই সন্তান তাদের মায়ের বর্তমান স্বামী অর্থাৎ সৎ বাবাকে ঠিকই বহু আগেই হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সৎ মা হিসেবে আমাকে সহ্যই করতে পারে না। অন্যদিকে আমার ছোট মেয়ে নায়লা মেহেদীকে কোনোভাবেই সম্পর্ক অনুযায়ী সৎ বাবার আসনটুকু দিতে নারাজ। কিন্তু স্বচ্ছন্দে তার বাবার জন্য পাত্রী দেখছে এবং তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথাও বলছে। আর ব্যতিক্রম শুধু আমার বড় মেয়ে রোদেলা। দিনশেষে সে সবাই যার যার মতো করে সুখে আছে এটাই দেখতে চায়। এ কারণে বেচারিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট নোংরা মন্তব্যেরও মুখোমুখি হতে হয়। আমার রোদেলা! সন্তানের চাইতেও বেশি যে আমার জীবনে মায়ের রূপে এসেছে! আজ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে রোদেলাই আছে এবং থাকবে জানি।’
বিয়ের সাত মাসে কী কী ঘটেছে- তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন জনপ্রিয় এই গায়িকা।লেখেন, ‘এই সাত মাসের পথচলায় এতো বেশি হোঁচট খেয়েছি, সম্পর্কের বিষাক্ত দিক দেখেছি, সন্তানের অবহেলা পেয়েছি, অসম্মানিত হয়েছি, কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে যোগাযোগ হারিয়েছি, সৎ ছেলে মেয়ের কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে বারংবার কটু কথা শুনেছি। শ্বশুরবাড়ির তিরস্কার দেখেছি, নিজের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছি, পিতা-মাতাহীন নিজেকে অসহায় ভেবেছি, দুমুখো মানুষ দেখেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি, অবাক হয়েছি, ঘেন্না করেছি, তীব্র ভয় পেয়েছি, কেঁদেছি, টালমাটাল হয়েছি, অভিযোগে দিশেহারা হয়েছি, এত বছরের সংসার জীবনের মাঝপথে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করেছি, চিৎকার করেছি, গালি দিয়েছি, সুন্দর চেহারার আড়ালে কদর্য রূপ দেখেছি, শিক্ষিত মানুষের বিকৃত রুচি দেখেছি, আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা দেখেছি, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, অভিমানে বোবা হয়ে গেছি, বিশ্বাস হারিয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছি, সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, নিজের মৃত্যু কামনা করেছি, মানসিক অবসাদে ভুগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। পূর্বে অনেক চড়াই উৎরাই পার হলেও এত কিছু একবারে, একসঙ্গে আগে কখনও ঝড়ের গতিতে জীবনে আসেনি। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী!’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্যের প্রসঙ্গে ন্যানসি লেখেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করলে উপহার হিসেবে একগাদা গালি; আতঙ্ক নিয়ে পোস্ট মুছে দিলে পুনরায় সংসার ভাঙার খেতাব! মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বজোড়া দজ্জাল শ্বশুরবাড়ি নিয়ে বসে আছি যাদের কাজ হলো আমার খুঁত ধরা।’
পোস্টের শেষে ন্যানসি তার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে লেখেন, ‘এত কিছুর পরও মেহেদী আর আমি সংসার চালিয়ে যেতে চাই, একসঙ্গে বৈরী পথ চলতে চাই, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে চাই, একে অপরকে জীবনে প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকার মতো ভালোবাসি বলতে চাই, হাতের ওপর হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে চাই, দিন শেষে সাত মাসের চেনা ঘরে ফিরতে চাই, সংসারের পরিচিত গন্ধে শ্বাস নিতে চাই, নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই, রাত জেগে অহেতুক ঝগড়া শেষে জড়াজড়ি করে ঘুমোতে চাই। কী অদ্ভুত আমাদের চাওয়া পাওয়া!’
উল্লেখ্য, ন্যানসি ২০০৬ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভকে। ওই সংসারে জন্ম নেয় কন্যা রোদেলা। পরে সৌরভের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। এরপর নাজিমুজ্জামান জায়েদের সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি।সেই সংসারে জন্ম নেয় কন্যা নায়লা। গত বছরের এপ্রিলে জায়েদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার।এর কয়েক মাস পর পারিবারিক আয়োজনে গীতিকার মহসিন মেহেদীকে বিয়ে করেন ন্যানসি।