নাপা সিরাপে সমস্যা পায়নি ‍ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

0
298

খবর৭১ঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাপা সিরাপ খাওয়ার পর দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও একই ব্যাচের অন্য সিরাপে কোনো সমস্যা পায়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওই ব্যাচের আটটি সিরাপের মধ্য থেকে তিনটির পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ। আর শিশু দুটি যে বোতলের ওষুধ খেয়েছিল সেগুলো সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে জানা যাবে সমস্যা আছে কি না।

সোমবার বিকালে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ‘নাপা সিরাপে শিশুমৃত্যুর অভিযোগ’ প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মহাপরিচালক। তিনি বলেন, দোকান থেকে নেওয়া বেক্সিমকোর নাপা সিরাপের তিনটি ব্যাচের আটটি নমুনার মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধের গুণগত মান সঠিক ছিল।

গত ১০ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামের দুই শিশু মারা যায়। তাদের মা লিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, নাপা খাওয়ার পর তারা মারা গেছে।

ওই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা থেকে টিম পাঠানো হয় আশুগঞ্জে। পরে সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

তবে দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি সংস্থার মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই এটা পরিষ্কার হবে।’

ঘটনার পর সিরাপের মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল, সেই সংশয় দূর করতে এই সংবাদ সম্মেলন বলেও জানান মোহাম্মদ ইউসুফ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আশুগঞ্জে নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটনায় আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ইমরান হোসেন সেখানে পাঠাই। তিনি স্থানীয় পুলিশ, ওষুধ সমীতির সদস্য, সিভিল সার্জনসহ মা ফার্মেসিতে (যেখান থেকে নাপা সিরাপ কেনা হয়েছিল) অভিযান চালান। ওখান থেকে নমুনা হিসেবে ৮টি সিরাপ সংগ্রহ করেন। আমরা সেগুলো পরীক্ষার জন্য আনি। এ ছাড়া আমরা আরও দুটি টিম পাঠাই। একটি টিম ঘটনাস্থল এবং অন্যটি কারখানা পরিদর্শন করে।

পরবর্তী কার্য‌্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, পরে আমার একটি চিঠি লিখে স্থানীয় পর্যায় থেকে ওই ব্যাচের নমুনা তুলে আমাদের কাছে পাঠাতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা আর বেক্সিমকোকে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলি। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের ওই ব্যাচে ৮২ হাজার বোতল সিরাপ তৈরি হয়েছিল। সেগুলো বাজারজাত করা হয়েছে। তবে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু মৃত্যুর পর বেক্সিমকো বাজারে থাকা ওই ব্যাচের সিরাপের নমুনা পরীক্ষা করেছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, তারা (বেক্সিমকো) আবার নমুনা পরীক্ষা করেও কোনো সমস্যা পায়নি। সিরাপের গুণগত মান ঠিক ছিল। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে যারা ছিলেন তার বলেছেন, সিরাপের কারখানার মান নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন সন্তুষ্টজনক। দোকান থেকে ৮ নমুনার মধ্যে ৩টির নুমনা পরীক্ষা ফল আমাদের হাতে এসেছে। এটির মান সঠিক আছে।

মারা যাওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধটি নকল ছিল কি না- এমন প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, দুই শিশু মারা যাওয়ার পর ব্যবহৃত ওষুধটি পুলিশের সিআইডিতে চলে গেছে। সেখানে ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদন এলে জানা যাবে শিশুদের মৃত্যুর পেছনে ওই সিরাপের কোনো ভূমিকা ছিল কি না।

এসময় অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, বেক্সিমকোর কাছে যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যা তারা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ওই ব্যাচের নাপা সিরাপের মান সন্তোষজনক।

তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়েও ওষুধটি নিয়ে আমাদের পরীক্ষা চলছে। এখন পর্যন্ত সেগুলোর ফল ঠিক আছে। তবে যে সিরাপটি খেয়ে এমনটা হয়েছে সেটি পুলিশের সিআইডির কাছে, থাকায় মূল কারণ আমরা বলতে পারছি না। অন্য কোনো কারণেও মারা গেছে কি না, সেটিও তদন্ত করছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here