সৈয়দপুরে নিত্যপণ্যের দামে আগুন দিশাহারা সাধারণ মানুষ

0
188

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে
সৈয়দপুরে কাঁচা বাজারসহ নিত্যপণ্যের মূল্যে আগুন লেগেছে। আর আগুনের তাপে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় ফের উর্ধ্বমুখী মাংসের বাজার। এছাড়া প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ হারে। ফলে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা অসহায় নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ। এসব ক্রেতারা কিছু দাম কমানোর আশায় এ দোকান থেকে ও দোকানে ঘুরেও কোন লাভ হচ্ছে না।
সরেজমিনে সৈয়দপুর পৌর আধুনিক সবজি বাজার, গেট বাজার, গোয়ালপাড়া সবজি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন সবজি ৪০ টাকার নিচে মিলছে না। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া খাসি, মুরগী ও বিভিন্ন জাতের মাছের দামও উর্ধ্বমুখী। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। দফায় দফায় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতাদের সাথে বাক বিতন্ডা হচ্ছে। এক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন নানা অজুহাত। সচেতন মহলের অভিযোগ মাঠ পর্যায়ে বাজার মনিটরিং কমিটির তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। মনিটরিং কমিটি যদি কঠোর তদারকি না করে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। আসছে রমজানে প্রতিটি পণ্যে মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনার আশংকা আরও বাড়িয়ে দিবে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে গরুর মাংস ৫৫০/৫৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে। খাসির মাংসেরও একই অবস্থা। গত সপ্তাহে ৭০০ টাকার খাসি মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, হাট ও খামারে গরু ও খাসির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। এদিকে হঠাৎ করে গরু ও খাসির মাংসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মুরগিতে। সাধারণ ক্রেতারা গরু ও খাসির মুরগিতে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছেন। এ কারণে মুরগির চাহিদা বাড়ায় দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে এর আগে যে ব্রয়লার বিক্রি হতো ১৩০ কেজি টাকা দরে এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে। লেয়ার ২২০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৩০/২৪০ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৮০ টাকার স্থলে ৪১০/৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচামালের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের শাক সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। করলা ১১০/১২০, বরবটি ৪০, টমেটো ২৫/৩০, গাজর ২০/২৫, মটরশুঁটি ৫০/৬০, ফুলকপি ২০/২৫, বাঁধাকপি ১০/১৫, লাউ ৩০/৪০, কাঁচাকলা ৩০, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেজিতে ১০/১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০/৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম হু হু করে বাড়ছে। কয়েক দিন আগে খোলা সয়াবিন তেল ১৭০/১৭৫ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা দরে। বোতলজাত সয়াবিন তেল ১ লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকায়। এছাড়া মূল্য বৃদ্ধি হয়ে মসুর ডাল (দেশী) ১২৫ টাকা, চিনি ৮২ টাকা, আটা ৩৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, লবণ ৩২ টাকা এবং বিভিন্ন প্রকারের চাল ৪৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের অসহায়ত্বের বিষয়টি। তারা জানান, বাজারে সবকিছুর দামই উর্ধ্বমুখী। কোন পণ্যেই হাত দেয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে মূল্য বৃদ্ধিতে আগুন। আর ওই তাপেই পুড়ছে তারা। তারা বলেন দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ অসহায়। অনেকে পণ্যের লিস্ট কাটছাট করে স্বল্প পরিমাণে শাক সবজি কিনছেন। মাছের বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। ছোট বড় মাছ ২০০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না। মাঝে মাঝে দেশী প্রজাতির মাছ বাজারে দেখা গেলেও ৪০০/৫০০ টাকার নীচে দাম বলছেন না বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে শাক সবজি, মাছ মাংসের বাজারে জ্বলছে মূল্য বৃদ্ধির আগুন।
এদিকে প্রতিটি পণ্যে মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নাগরিক আন্দোলন নেতা রুহুল আলম মাস্টার জানান, বাজার মনিটরিং কমিটি থাকলেও তাদের কোন তৎপরতাই দেখা যায় না। ফলে তাদের উদাসিনতার কারণে হু হু করে বাড়ছে পণ্যের মূল্য। তিনি বলেন বাজার মনিটরিং কমিটি কঠোর তদারকি না করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। আর এর খেসার দিতে হতে পারে আসছে রমজানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here