স্টাফ রিপোটার, বাগেরহাট:
বাগেরহাট শহরের পূর্ব বাসাবাটি এলাকায় বালু ফেলে একটি খাল ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে। এক মাস ধরে খালটি বন্ধ থাকায় গোসল-পয়োনিষ্কাশনসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানি পেতে দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা। শতাধিক পরিবারের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি তাঁরা আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
স্থানীয়দের দাবি, বাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম নালা (ড্রেন) নির্মাণের কথা বলে এই খালে বালু ফেলেছেন। এখন বালু অপসারণ করে খালটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোছাব্বেরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী থেকে রহমাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কঘেঁষে পূর্ব বাসাবাটি এলাকায় প্রবেশ করা খালটি স্থানীয়দের কাছে পূর্ব বাসাবাটি খাল নামে পরিচিত। খালটি গড়ে ১৩ থেকে ১৬ ফুট চওড়া এবং ৭ থেকে ১০ ফুট গভীর ছিল। কিন্তু দুই পারের মানুষের দখল ও এলাকাবাসীর ফেলা ময়লায় খালটির বেশির ভাগ অংশ এখন মৃতপ্রায়।
দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা থাকলেও খাল খননে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু মাসখানেক আগে বাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মাণের কথা বলে খালটির বেশির ভাগ অংশ বালু ফেলে ভরাট করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে খালের কিছু অংশ খনন করেছেন অভিযুক্ত নারী কাউন্সিলর ও তাঁর লোকজন। তবে স্থানীয়দের দাবি, ১৩ থেকে ১৬ ফুট চওড়া খালটি মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ ফুট চওড়া করে দেড় থেকে ২ ফুট গভীরে খনন করা হয়েছে। এখন স্থানীয়দের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কাউন্সিলর, যাতে খাল নিয়ে আর কোনো কথা না বলেন। এই অবস্থা থাকলে বৃষ্টির সময় ওই এলাকায় বসবাস করার অবস্থা থাকবে না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা মাসুম হাওলাদার।
পূর্ব বাসাবাটি এলাকার বৃদ্ধ মুনছুর আলী শেখ বলেন, কয়েক যুগ আগে জমি কিনে ওই এলাকায় বাড়ি করেছেন। তখন থেকেই এই খাল দিয়ে বৃষ্টির পানিসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু এক মাস আগে স্থানীয় কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মাণের কথা বলে বালু ফেলে খালটি বন্ধ করে দেন। ফলে এখানে আর বসবাসের পরিবেশ নেই। খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা।
সুরিয়া বেগম ও ফুল বানু নামের দুই নারী বলেন, তাঁরা ড্রেন চান না, খাল চান। এই খাল যেমন ছিল, তেমন চান। এই খালের পানি দিয়ে তাঁরা থালবাটি, মাছ-তরকারি ধোয়া, বৃষ্টির সময় বাচ্চাদের গোসলসহ সবই করতেন। ড্রেন দিলে কি তা করতে পারবেন? ড্রেনে পানিও সব নামবে না। বৃষ্টির সময় ঘরের মধ্যে দু-তিন ফুট পানি হয়ে যাবে। বৃষ্টির মৌসুম আসার আগে এই খাল খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তাঁরা।
বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী পূর্ব বাসাবাটি এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খাল বন্ধ করে ড্রেন নির্মাণের মতো হাস্যকর ব্যাপার কোনো দিন শুনিনি, এখন আমাদের বাস্তবে দেখতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, যে পাশ থেকে খালটি ভরাট করা হয়েছে, ওই পাশে শাসক দলের এক ব্যক্তি জমি কিনে প্লট আকারে বিক্রি করছেন। ওই জমিতে যাওয়ার রাস্তা তৈরির জন্যই মূলত এই খালটি ভরাট করা হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম বলেন, খালটি নাব্যতা হারিয়েছে। দুই পাড়ের মানুষের বর্জ্যে এটি এত নোংরা হয়েছিল যে, কোনো শ্রমিক নামতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাই ড্রেন নির্মাণের জন্য খালটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তাঁরা খাল খনন শুরু করেছেন। খালটি তাঁরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে আসা করেন তিনি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, নারী কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম খাল খনন শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাঁরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। গতকালও উপজেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার খালটি পরিদর্শন করেছেন। খালটি সরকারি রেকর্ড ও ম্যাপ অনুযায়ী যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় নেওয়া পর্যন্ত কাজ করবেন। দ্রুত সময়ে তাঁরা খালটি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে জনভোগান্তি লাঘব করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।