দুজনে গলাটিপে হত্যা করে অভিনেত্রী শিমুকে

0
196

খবর৭১ঃ অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার স্বামী সাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ। তারা আদালতে বলেছেন, নোবেলের সঙ্গে ঝগড়ার একপর্যায়ে তারা দুজনে মিলেই শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেছে।

৩ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার দুই বিচারিক হাকিমের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। নোবেলের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম ও ফরহাদের জবানবন্দি নেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিশকাত সুকরানা।

পুলিশ বলছে, ফোনে কথা বলা নিয়ে নোবেল ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শিমু কার সঙ্গে কথা বলতেন তা নিয়ে সন্দেহ করতেন নোবেল। ঘটনার দিন সকালেও শিমু ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথা বলা শেষ করলে হঠাৎ স্ত্রীর ফোন দেখতে চাইলে নোবেলের সঙ্গে ঝগড়ার সূত্রপাত হয়।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল নোবেল ও ফরহাদকে। তারা দুজনেই শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ দেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি সকালে নোবেলের গ্রিন রোডের বাসায় হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে সেখানে আসেন ফরহাদ। ফরহাদ নোবেলের বাল্যবন্ধু। প্রায় ৪০ বছরের সম্পর্ক তাদের। ফরহাদ ছিল বেকার। মাঝে মধ্যে তিনি নোবেলের কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন।

১৬ জানুয়ারি সকালেও দুই হাজার টাকা ধার নিতে নোবেলের বাসায় যান ফরহাদ। এ সময় তাকে চা দেন শিমু। ফরহাদ ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে বেডরুমে নোবেল ও শিমুর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। দুজনই উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। হইচই শুনে ফরহাদ ড্রয়িং রুম থেকে শিমুর বেডরুমে যান।

এ সময় মেজাজ হারিয়ে শিমুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নোবেল। সেখানে ফরহাদ হাজির হলে নোবেল তাকে সহায়তা করতে বলে। ফরহাদ ছিল নোবেলের বাধ্যগত। এ জন্য তিনি নোবেলের কথামতো শিমুকে চেপে ধরে। দুজন মিলে গলাটিপে ধরায় শিমু মারা যান।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে শিমুর ব্যবহৃত গাড়িতে লাশ তোলা হয়। এর পর সেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নোবেল ও ফরহাদ। সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও লাশ ফেলার সুযোগ পায়নি। এক পর্যায়ে তারা আবার গ্রিন রোডের বাসায় ফেরেন। এর পর সন্ধ্যায় আবার গাড়ি নিয়ে বের হয়। ঘুরতে ঘুরতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেরানীগঞ্জের হজরতপুরের আলীপুর ব্রিজের কাছে যায়। জায়গাটা নির্জন এবং লোকজনের উপস্থিতি না থাকায় সেখানে লাশ ফেলে তারা গাড়ি নিয়ে যান।

পর দিন সকালে বস্তাবন্দি অবস্থায় অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই নারীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সহায়তায় তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আব্দুস ছালাম।

প্রসঙ্গত কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শিমুর। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষী নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের প্রায় ২৫টি সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাকে। শাকিব খান, অমিত হাসানসহ কয়েকজন তারকার সঙ্গেও কাজ করেছেন শিমু। শিমু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় এবং প্রযোজনাও করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here