স্থূলতা কতটা মারাত্মক

0
214

খবর৭১ঃ প্রতিবছর বিশ্বে ২৮ লাখেরও বেশি মানুষ স্থূলতা বা শরীরে অতিরিক্ত ওজন হওয়ার জন্য মৃত্যুবরণ করে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ অনেক ক্রনিক রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, যকৃতের রোগ, নানা ধরনের ক্যানসারের কারণ। স্থূলতার ঝুঁকি ও করণীয় নিয়ে লিখেছেন প্রফেসর ডা. এইচ. এন. সরকার। ধারাবাহিক এ প্রতিবেদনটির শেষ পর্বে স্থূলতার প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

অতীতে মানুষের ধারণা ছিল, মোটা হলেই স্বাস্থ্যবান। জ্ঞান বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাধারা পরিবর্তন হয়েছে। স্থূলতা একটি শারীরিক ব্যাধি। মোটা-তাজা সুঠামদেহ মানেই স্থূলত্ব নয়। স্থূলত্ব মানে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা। বিশ্বের সব দেশেই স্থূলতা একটি সমস্যা। ১৯৫টি দেশে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার এপিডেমিওলজিক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে ৭৩টি দেশে স্থূলতার প্রাদুর্ভাব ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের হিসাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক স্থূল প্রাপ্তবয়স্ক এবং চীন ও ভারতে স্থূল শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০১৮ সালে ৪২ শতাংশ আমেরিকানরা স্থূল ছিল। স্থূলত্ব নিয়ে বিশেষ আয়োজনের প্রথম পর্ব প্রকাশ হয়েছে গত শনিবার।

স্থূলতার ব্যবস্থাপনা

অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতার স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশিরভাগ কমানো সম্ভব যদি তা শুরুতেই চিহ্নিত করে চিকিৎসা করা হয়। ওজন হ্রাস করার পরিকল্পনা চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ছয় মাসে ব্যক্তির বর্তমান ওজনের ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস করার সুপারিশ করেছে। এগুলো নিুলিখিত উপায়ে সম্পন্ন করা যায়-

* জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে, যেমন- খাদ্য, ব্যায়াম, পরিবেশের পরিবর্তন

* স্থূলত্বের ওষুধ

* সার্জারি

খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামই হলো স্থূলতার মূল চিকিৎসা। খাদ্যনিয়ন্ত্রণ স্বল্পমেয়াদে ওজন হ্রাস করতে পারে; তবে এই ওজন হ্রাস ধরে রাখতে হলে ব্যায়াম ও স্বল্প ক্যালরিসম্পন্ন খাদ্য জীবনযাত্রার স্থায়ী অংশ হতে হবে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলো-

খাদ্য : ওজন হ্রাস করে এমন খাদ্যগুলোকে সাধারণত চারটি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়-

* কম চর্বিযুক্ত খাদ্য : সাধারণ খাদ্যে ৩০ শতাংশ এর পরিবর্তে ১৩ শতাংশ চর্বি থাকে।

* কম শর্করাযুক্ত খাদ্য : ৬০ শতাংশ এর পরিবর্তে ১০ শতাংশ শর্করা থাকে।

* কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য : দৈনিক মোট শক্তি চাহিদার চেয়ে ৬০০ কিলোক্যালরি কম থাকে। খুব কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য দৈনিক মহিলাদের জন্য ৪০০ কিলোক্যালরি এবং পুরুষদের জন্য ৫০০ কিলোক্যালরি শক্তি খাদ্য সরবরাহ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট নির্বিশেষে ২-৪ কেজি ওজন হ্রাসের জন্য মূল তিনটি খাদ্য (কম ক্যালরি, কম কার্বোহাইড্রেট এবং কম ফ্যাটযুক্ত খাদ্য) এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বেশি প্রোটিনযুক্ত খাদ্যের কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। বেশি চিনিযুক্ত খাদ্য, যেমন- কোমল পানীয় ওজন বাড়ায়।

* স্বল্প ক্যালরিযুক্ত খাদ্য : একটি সুষম খাদ্য যা মহিলাদের জন্য ১২০০ থেকে ১৪০০ কিলোক্যালরি এবং পুরুষদের জন্য ১৫০০ থেকে ১৮০০ কিলোক্যালরি পরিমাণের মধ্যে সীমিত রাখে। যা দৈনিক মোট শক্তি গ্রহণের তুলনায় ৬০০ কিলোক্যালরি কম, এই খাদ্য সপ্তাহে ০.৫ কেজি ওজন হ্রাস করে।

* খুব কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য : এটি দৈনিক ৪০০-৫০০ কিলোক্যালরি সরবরাহ করে। প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বজায় রাখে তবে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট উভয় থেকে ক্যালরি সীমিত করে এবং এটি প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১.৫-২.৫ কেজি ওজন হ্রাস করে। এই খাদ্যগুলো সাধারণের ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয় না। কারণ এগুলো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন- মাংসপেশির ওজন হ্রাস, গাউটের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।

খাদ্য দিয়ে স্থূলত্বের চিকিৎসা

* দীর্ঘমেয়াদি ওজন হ্রাস প্রোগ্রামগুলোর সফলতা খাদ্যসামগ্রীর ওপর নির্ভরের চেয়ে কত ক্যালরি গ্রহণ করলেন এবং ব্যায়াম ও প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে কত ক্যালরি খরচ করলেন তার ওপর বেশি নির্ভর করে।

* উপবাসের ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস পেতে পারে, তবে চর্বির সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পাতলা মাংসপেশি হারাতে পারেন।

* ওজন হ্রাস করতে এবং এটি বজায় রাখতে, খাদ্যের চিন্তা না করে একটি স্বতন্ত্র খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করুন। পছন্দসই একটি পরিকল্পনা স্থায়ী ওজন হ্রাস উৎপাদন একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।

* একজন ডায়েটিশিয়ান বিশেষ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে একটি স্বতন্ত্র খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

* একটি সুষম খাদ্য যা মহিলাদের জন্য ১২০০ থেকে ১৪০০ কিলোক্যালরি এবং পুরুষদের জন্য ১৫০০ থেকে ১৮০০ কিলোক্যালরির মধ্যে সীমিত রেখে ভালো কাজ করতে পারে।

* খাদ্যপরিকল্পনায় বিভিন্ন ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সাদা ভাত এবং সাদা রুটির চেয়ে পুরো দানা যেমন ব্রাউন রাইস এবং গোটা গমের রুটি বেছে নিন। পুরো শস্য জাতীয় খাবার পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং আঁশ (ফাইবার) বেশি থাকে, তাই দেহ এগুলি ধীরে ধীরে শোষণ করে। এর অর্থ তারা ইনসুলিন নিঃসরণে দ্রুত উচ্চমাত্রা সৃষ্টি করতে পারে না, যা ক্ষুধা এবং বাসনার উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে।

* বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজির কমপক্ষে পাঁচটি পরিবেশনা গ্রহণ করুন। বিভিন্ন ফল এবং শাকসবজিতে বিভিন্ন পরিমাণে এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি থাকে।

* সব চর্বিই খারাপ হয় না। হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোআনস্যাচুরেটেড চর্বিগুলো উপকারী। তাই বাদাম, বীজ এবং কিছু ধরনের তেল যেমন জলপাই, কুসুম এবং ক্যানোলা স্বাস্থ্যকর খাবার পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

* বাইরে বেরোনোর সময় একটি টিফিন বাক্সে খাবার নিয়ে নেবেন এবং রেঁস্তোরার খাবার এড়িয়ে চলুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here