রেদোয়ান হোসেন জনি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম): মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের এক দুর্গম পাহাড়ি জনপদ। করেরহাট বাজার হতে প্রায় সাত কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কের দু’পাশের এই জনপদে আদিবাসী(ত্রিপুরা) ও বাঙালির মেলবন্ধনে প্রায় অর্ধ-সহস্রাহিক জনগোষ্ঠির বসবাস। জনসাধারণের প্রায় সবাই পাহাড়ের জুমে ও মধ্যবর্তী সমতলে কৃষি কাজ করে কোনরকমে দিনানিপাত করে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত জনগোষ্ঠির আবাসভূমি এ জনপদটি বরাবরই অবহেলিত। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ তথা জনগণের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার সরকারের অঙ্গীকার এখানে বাস্তবায়ন হয়নি এখনো; ফলে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ জনপদে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নেমে আসে ভৌতিক অন্ধকার। মোবাইল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা; আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোন মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর টাওয়ার না থাকায় তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগেও এই প্রযুক্তিগত সুবিধা হতে বঞ্চিত এ জনপদের মানুষগুলো। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায়ও উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়া লাগেনি; ফলে জীবন-জীবিকার তাগিদে বন্দুর-দুর্গম পাহাড়ি পথে নিত্য যাতায়াতে অধিবাসীদের বর্ষাকালে তো বটেই, শুষ্ক মৌসুমেও অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করতে হয়। দুর্গম-বন্দুর পাহাড়ি পথ ও অধিক দূরত্বের কারণে খুব কম সংখ্যক প্রজন্মই দূর-দূরান্তের শিক্ষালয়ে গিয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ পেত; বরাবরই শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত কালাপানিয়ার প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য অবশেষে ০১ জানুয়ারি ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান এর নামে ‘শেখ রাসেল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন। বর্তমানে ০৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে সেখানে শতাধিক আদীবাসি ও বাঙালি পরিবরারের প্রায় দেড় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো পেয়ে নিজেদের আগামীদিনের উপযুক্ত করে গড়ে তুলছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকার নামমাত্র সম্মানী, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণের অভাব ও অবকাঠামোগত সংকটে ভুগছে বিদ্যাপীঠটি। টিনের ছাউনি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে যায় শ্রেণিকক্ষগুলো-জানিয়েছেন শুভ ত্রিপুরা। এছাড়াও যাতায়াতের দুরবস্থা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে দূর-দূরান্তের শিক্ষালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষালাভ করা এখানে যেন এখনও অনেকের স্বপ্ন!
তথ্য-প্রযুক্তি ও উন্নয়নের মহাসড়কে অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু আলোর নীচে যেমন অন্ধকার-ঠিক তেমনি কালাপানিয়াও যেন এখনো অন্ধকারে নিমজ্জিত, নানাবিধ সমস্যায় নিপতিত। সময়ের চাহিদায় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া এ জনপদের সার্বিক চিত্র বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যাসমূহ আশু সমাধানপূর্বক সম্ভাবনাময় এ জনপদের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছে সেখানে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠি।