খবর৭১ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির করা মামলায় ১২৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৮৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অন্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিক ও শিক্ষক রয়েছেন।
সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক মামলাটির অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে আগামী ৩০ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত। এর মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে মামলাটির আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
অভিযোগ গঠন হওয়া ১২৬ আসামির মধ্যে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই আসামিরাসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলাটিতে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- মহিউদ্দিন রানা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. রিমন হোসেন, ইশরাক হোসেন রাফি, নাভিদ আনজুম তনয়, এনামুল হক আকাশ, ফারজাদ সোবহান নাফি, তানভির আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, এস এম রিফাত হোসেন, ফারদিন আহমেদ সাব্বির, প্রসেনজিৎ দাস, আজিজুল হাকিম, নাহিদ ইফতেখার, রফিকুল হাসান এছামি, বনি ইসরাইল, মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বাহাদুর, মো. আইয়ুব আলী বাঁধন, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মাসুদ রহমান তাজুল, অসীম বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম, সাইদুর রহমান, হাসমত আলী, আনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, হোসনে আরা, কাজী মিনহাজুল ইসলাম, রাফসান করিম, আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, শিহাব হাসান খান, সালমান এফ রহমান, মুহায়মেনুল ইসলাম, সজিব আহমেদ, আব্দুর রহমান রমিজ, মাহবুব মামুন ও অন্যান্য।
অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এসময় আদালতে উপস্থিত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন আদালত।
২০১৭ সালে সারাদেশে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে ওই বছরের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলে সিআইডি অভিযান চালায়।
সেসময় আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মহিউদ্দিন রানা নামের ঢাবির দুই শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন। পরদিন তাদের দেওয়া তথ্যে পরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন রাফি নামে ভর্তিচ্ছু এক পরীক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নফাঁসের এই ঘটনার সঙ্গে ঢাবি ছাত্র সমীর, মিজান, আজাদ, ওমেগা কোচিংয়ের তন্ময়, মাইলস্টোন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সুব্রত জড়িত বলে জানতে পারে সিআইডি।
পরে পুলিশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসে এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। দেশব্যাপী এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম মামলা করেন।
পুলিশের সাইবার তদন্ত ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস মামলাটি তদন্তকালে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় স্বীকার করেন। ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ১২৬ আসামির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ২০১৯ সালের ২৩ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।