খবর৭১ঃ অষ্টম দফায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন আরও সাড়ে ৫শ রোহিঙ্গা।
শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ৯টি বাসে ৩৮৯ জন এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ১৪৮ জন রোহিঙ্গা নিয়ে ৬টি বাস উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের নেভাল ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সঙ্গে খালি বাস, মালামাল নিয়ে একাধিক কাভার্ডভ্যান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা টিমের বহর সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পথেই ছিল।
গত ২৪ নভেম্বর সপ্তম দফায় ৩৭৯ জন রোহিঙ্গা উখিয়া ত্যাগ করার পর ২৫ নভেম্বর ভাসানচর পৌঁছান।
গত এপ্রিলে বর্ষায় যাত্রা স্থগিত করার পর ইউএনএইচসিআর ও সরকারের মাঝে ভাসানচরে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হওয়ার পর ২৪ নভেম্বর প্রথমবার এবং ১৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গা যাত্রা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ভাসানচরে যাবার উদ্দেশ্যে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সরঞ্জামসহ সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। শুক্রবার সকালেও আসে অনেকে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাসে ওঠা শুরু করে রোহিঙ্গারা। এরপর ১টার দিকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে প্রথম বহর চট্টগ্রামের পথে রওনা দেয়া হয়। আর দ্বিতীয় বহর যাত্রা করে বিকাল ৪টায়।
পূর্বের নিয়মে রাতে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করবেন তারা। সেখান থেকে শনিবার নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে যাবার প্রস্তুতি রয়েছে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, সরকারের সিদ্ধান্তে উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্প থেকে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচর স্থানান্তর হবে। কাউকে জোর করে নয়, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানানোর পর যারা স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হচ্ছেন তাদের জড়ো করে নির্ধারিত একটি দিনে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ যাত্রা চলমান থাকবে। অষ্টম দফায় ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা ভাসানচর যাবার পথে রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে তোলার পর সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের মতে, ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা নিজ নিজ ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে নাম জমা দেন। ভাসানচরের পরিবেশ, থাকা খাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে ব্রিফিং করার পর যারা যেতে রাজি হচ্ছে তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
তাদের মতে, বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা দোলাচলে ভোগে। এটা আমাদের আশ্রয়ের জীবন। যেখানেই থাকি সেটা মানবিক সহায়তা। কিন্তু ভাসানচরে বন্দি জীবন মনে করে অনেকে যেতে চান না। কিন্তু সম্প্রতি ভাসানচরের রোহিঙ্গারা চাইলে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের দেখতে আসতে পারবে, সরকারের এ ঘোষণার পর ভাসানচরমুখী মানুষের সংখ্যা আবার বাড়ছে।
কক্সবাজার-১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাইমুল হক নাইম জানান, দুইভাবে বিভক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের আরও একটি দল শুক্রবার ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ত্যাগ করেছে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নিতে আগ্রহী সরকার। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আট দফায় প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরের অধিবাসী হয়েছে। এরা ছাড়াও গত বছরের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টাকালে ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।