খবর৭১ঃ শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহণে হাফ পাশ (অর্ধেক ভাড়া) বাস্তবায়নে পরিবহণ নেতাদের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকে উল্টো ভর্তুকি দাবি করেছেন বাস মালিকরা।
শনিবার ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে টানা দুই ঘণ্টা বৈঠক চলে। এ সময় পরিবহণ নেতারা টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করার দাবি জানান।এ ছাড়া বিআরটিএ’র সঙ্গে আলোচনায় নেতারা ১১টি প্রস্তাব দিয়েছেন।
পরিবহণ নেতাদের দেওয়া ১১ প্রস্তাবগুলো হলো:
১. সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিসি পরিচালিত বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কীভাবে- তা জানা থাকলে আমাদের জন্য ভালো হবে। তা না হলে বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া অন্য বাসগুলোতে কেন নয় বলে উত্তেজনা আরও বাড়বে।
২. হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীরা দেবে বাকি টাকা পূরণ করা হবে কীভাবে এবং কোন তহবিল থেকে?
৩. সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার জন্য বাস ব্যবহার করেন কতজন? হাফ ভাড়া নিলে ভর্তুকি কত টাকা দিতে হবে?
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা কীভাবে কনশেসন প্রদান করে- তা জানা দরকার।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহণ কার্ড চালু করা দরকার, যা প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। তাহলে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সেটি নিশ্চিত সম্ভব হবে।
৬. এ বছর শিক্ষা বাজেট ৭১ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলে মোট বাজেট দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। প্রতি বছর শিক্ষা বাজেট থেকে বেশকিছু টাকা ফেরত যায়। এই টাকাটা পরিবহণ ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।
৭. যেসব পরিবহণে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর হবে, সেসব পরিবহণে কিছু বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৮. দেশে সাড়ে ৪ কোটি ছাত্র। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। একটি যুক্তিসম্মত নিয়ম কার্যকর হলে সেটি ছাত্র এবং পরিবহণ শ্রমিক উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
৯. বড় শহরের মধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রামেই নগর পরিবহণ আছে। বাকি সারা দেশে সাধারণত স্বল্প দূরত্বে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।
১০. সরকার, পরিবহণ মালিক এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। তাহলে যে কোনো উত্তেজনা সহজেই প্রশমন করা সম্ভব হবে।
১১. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি। উভয় ক্ষেত্রে যারা গণপরিবহণ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য পরিবহণ ফি ঠিক করে সেটি দিয়ে কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করা যেতে পারে।
বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বিআরটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার মো. আশফাকসহ বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকায় নগর পরিবহণের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়।এ কারণে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।