ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: মায়ের অংশের জমি জবরদখল করতে গিয়ে জন্মধাত্রী মাকেই পিটিয়ে গুরুতর আহত করে পা ভেঙে দিয়েছে এক পাষণ্ড সন্তান। পেশায় তিনি আবার একজন পুরোহিত। অর্থাৎ হিন্দু সমাজের বড় জাত, যারা কি-না সাধারণ মানুষদের ন্যায়-অন্যায় জ্ঞানদান করেন। সেই ব্রাহ্মণ পরিবারেই এমন ঘৃণ্য ঘটনা ঘটায় জেলাজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ী ইউনিয়নের পাইকপাড়া নামক এলাকায়। এ ঘটনায় আহত মা শান্তি চক্রবর্তী বাদী হয়ে ছেলে মনি চক্রবর্তীসহ ৫ জনের নামে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ বছর আগে শান্তি চক্রবর্তীর ছেলে কেশব চক্রবর্তী তার পৈত্রিক সম্পত্তির সাড়ে তিন বিঘা জমি মায়ের নামে দানপত্র করে দেন। সম্প্রতি জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নিয়ে বড় ছেলে মনি চক্রবর্তী ও সৎ ছেলে বিনয় চক্রবর্তীর সাথে তাদের মায়ের ঝগড়া-বিবাদ ঘটে। এ অবস্থায় গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে ওই জমি জবরদখলে নেয়ার উদ্দেশ্যে জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করতে যায় তারা। ঘটনা জানতে পেরে মা শান্তি চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে গিয়ে এর প্রতিবাদ করলে তার নিজ সন্তান মনি চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী বন্দনা চক্রবর্তী, সৎ ছেলে বিনয় চক্রবর্তী, বিনয় চক্রবর্তীর ছেলে উৎসব চক্রবর্তী ও স্ত্রী চঞ্চলা চক্রবর্তী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের মারপিটে পা ভেঙে মাটিতে পড়ে যান শান্তি চক্রবর্তী। এ সময় তার আর্তচিৎকারে অপর ছেলে লক্ষণ চক্রবর্তী, বৌমা অঞ্জলী চক্রবর্তী ও নাতি অনিক চক্রবর্তী তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এল তাদেরও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে মনি চক্রবর্তী ও বিনয় চক্রবর্তী গং। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়।
এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা শান্তি চক্রবর্তী ছেলের এ ঘৃণ্য কাজের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। তিনি জানান, আমরা ব্রাহ্মণ জাতি, আমরা মানুষদের ন্যায়-অন্যায় জ্ঞানদান করি আর আমারই ছেলে সামান্য জমির লোভে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আমার পা ভেঙে দিয়েছে। মানুষ তো আমাদের ছি ছি করছে। আমি ন্যায়বিচারের আশায় আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করি আমি ন্যায়বিচার পাব।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনি চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা ঠাকুর হইছি এজন্য মারামারি করতে পারব না, এটা কেমন কথা? আমাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন। আমার জমির সমস্যা, আমি দুই বছর থেকে কোথাও বিচার পাচ্ছি না, তাই এসব করেছি। তবে মাকে পিটিয়ে পা ভেঙে ফেলার কথা এড়িয়ে যান তিনি।
মাকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়ার বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।