বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

0
287

খবর৭১ঃ  ১৭২ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই অ্যারন ফিঞ্চকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ বলে ৯২ রান তুলে এই ধাক্কা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ শিরোপার একদম কাছাকাছি নিয়ে গেলেন। মার্শ একপ্রান্ত আগলে রাখলেন শেষ পর্যন্ত, বাকি কাজ সারতে দারুণ অবদান রাখলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলেন অজিরা। ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল দলটি, কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে হেরে শিরোপা জেতা হয়নি। এবার সেই হতাশাটা ঘুচল।

অন্য দিকে নিউজিল্যান্ডের হতাশা আরও বাড়ল। টানা তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও একটা শিরোপাও জেতা হলো না কিউইদের। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেই শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের।

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ফাইনালে উঠেছিলেন কিউইরা। কিন্তু ম্যাচ টাই করেও অদ্ভূত এক বাউন্ডারি নিয়মের কারণে হারতে হয়েছে সুপার ওভারে গিয়ে। আজ আরেকটা বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে খালিহাতে ফিরতে হলো কিউইদের।

রোববার (১৪ নভেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৭২ রানের জবাব দিতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার সূচনাটা অবশ্য ভালো হয়েছে বলা যাবে না। সেমিফাইনালেও রান না পাওয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ আজও ব্যর্থ। দলীয় ১৫ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৫ রানে ট্রেন্ট বোল্টের ফিরেছেন ফিঞ্চ। তবে ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ সেই ধাক্কাটা বুঝতেই দিলেন না।

সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে উইকেট থেকে যথেষ্ট সুবিধা পাচ্ছিলেন ব্যাটাররা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওয়ার্নার, মার্শ সেই সুবিধা কাজে লাগিয়েছেন দুর্দান্তভাবে। অনেকদিন অফ ফর্মে থাকা ওয়ার্নার ফর্মে ফিরেছেন ঠিক সময়ে। বিশ্বকাপ জুড়েই দুর্দান্ত খেলছেন অজি ওপেনার। আজ ফাইনালেও অব্যাহত থাকল সেই ধারা।

ফিঞ্চকে শুরুতেই হারিয়ে যে চাপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্নার তা পাত্তাই দেননি। এদিকে তিনে নেমে মিচেল মার্শ আজ খেললেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ২০১১ সালে অভিষেকের পর দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা মার্শ সম্প্রতি সময়ে অস্ট্রেলিয়া দলে নিয়মিত। বিশ্বকাপ ফাইনালটা স্মরণীয় করে রাখলেন সেই মার্শ।

শুরুতেই অধিনায়ককে হারানো অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ বলে ৯২ রানের অসাধারণ এক জুটি পেলো বলেই ম্যাচটা একপেশে হয়ে যায়। আর ওয়ার্নারের সঙ্গে এই জুটিতে বড় অবদান মার্শের। দলীয় ১০৭ রানের মাথায় ট্রেন্ট বোল্টের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ওয়ার্নার ৩৮ বলে ৪টি চার ৩টি ছয়ে ৫৩ রান করে ফেরেন।

তবে মার্শ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে নিউজিল্যান্ডকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো রাস্তায় দেননি। ১৮.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য১৭৩ রান ‍তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। মার্শ তখন ৫০ বলে ৭৭ রান করে অপরাজিত। ৬টি চারের সঙ্গে ৪টি চার মেরেছেন মার্শ। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১৮ বলে অপরাজিত ছিলেন ২৮ রান করে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৮ রানে দুটি উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট।

এর আগে টস জিতে প্রথমে বোলিং নিতে দুবার ভাবেননি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। দুবাইয়ে হালকা শীতের রাতে প্রচুর শিশির পড়ছে। ফলে প্রথমে ব্যাটিং করা দলকে শুরুতে রান তুলতে হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিংয়ে সুবিধা মিলছে যার পুরো সুবিধাটা পাচ্ছে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দল। ফলে রাতের ম্যাচগুলোতে টস জিতে বোলিং নিচ্ছে দলগুলো এবং বিশ্বকাপুড়ে এই সিদ্ধান্ত জয় পরাজয়ে বড় ভূমিকাও পালন করে আসছে।

আজ অস্ট্রেলিয়াও শুরুর বোলিংয়ে সুবিধা পেয়েছে। নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ডারয়েল মিচেল শুরুতে সেভাবে রানই তুলতে পারেননি। দলীয় ২৮ রানের মাথায় মিচেল (১১) ফিরলে তিনে নেমে সুবিধা করতে পারছিলেন না কেন উইলয়ামসনও।

গাপটিল-উইলিয়ামসনের ৪৮ রানের জুটিতে গাপটিল ২০ বল খেলে তোলেন ১২ রান! দশ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৫৭/১। ১২তম ওভারের প্রথম বলে গাপটিল ৩৫ বলে ২৮ রানের অপ্রত্যাশিত এক ইনিংস খেলে ফিরলে মনে হচ্ছিল চ্যালেঞ্জিং স্কোর হয়তো গড়তে পারবে না নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ততোক্ষণে সেট হয়ে যাওয়া উইলিয়ামসন তারপর রীতিমতো ঝড় তুললেন।

প্রথম ১৩ বলে ৭ রান করা উইলিয়ামসন মিচেল স্টার্কের ১৬তম ওভার থেকে তোলেন ২২ রান। অপর প্রান্ত থেকে জস হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জাম্পা, প্যাট কামিন্স ভালো বোলিং করতে থাকাতে এই স্টার্ককেই টার্গেট করেছিলেন উইলিয়ামসন! স্টার্কের ৪ ওভার থেকে ৬০ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।

শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানে থেমেছে নিউজিল্যান্ড। উইলিয়ামসন ৪৮ বল খেলে ৮৫ রান করে আউট হয়েছেন। কিউই অধিনায়ক চার মেরেছেন ১০টি, ছক্কা ৩টি। এছাড়া জেমি নিশাম ৭ বলে ১৩ ও গ্লেন ফিলিপস ১৭ বলে ১৮ রান করেন।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জস হ্যাজেলউড ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। অ্যাডাম জাম্পা ২৬ রানে নিয়েছেন এক উইকেট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here