জবি প্রতিনিধি: জেলহত্যাকারী ও এর পেছনে যারা রয়েছেন তাদের বিচার যেনো দ্রুত করা হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সহ প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ- এ বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দের সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের (একাংশ)। নীলদলের পক্ষে এ দাবি জানান দলের সভাপতি ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন।
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল কর্তৃক আয়োজিত বুধবার এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। রাত ৯ টা থেকে শুরু হওয়া এ ওয়েবিনারে নীলদলের যুগ্ম আহবায়ক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের সঞ্চালনায় নীলদলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
ওয়েবিনারে নীলদলের শিক্ষক নেতা ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম লুৎফর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূণ্য করতে এবং পাকিস্তানের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে এই ঘটনা ঘটানো হয়। যেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, বিশ্বে বাংলাদেশ যেন একটি ব্যর্থ হয় তাই তারা বঙ্গবন্ধুর চার সঙ্গীকে হত্যা করেন।
নীল দলের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসাইন বলেন, বর্তমান সময়ে চার নেতার হত্যাকারীদের পেছেনের কুশীলবদের বের করা খুব বেশি কষ্টকর না। এই কুশীলবদের যতদিন খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে পারবো না ততদিন আমরা দায়মুক্ত হতে পারবো না।
আইনুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু যখন ৯ মাস কারাগারে ছিলেন তখন আমাদের এই চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু তারপরেও জেলহত্যা দিবস বর্তমান সময়ে দিন দিন গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। দিনটির কথা আমরা ভুলতে বসেছি। প্রজন্মের কাছে এই দিনটির তুলে ধরতে হবে। এ ধরনের ঘটনা যেনো আর না ঘটে এবং এই দিনটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। অথচ এই দিনটিকে আমাদের জাতীয়ভাবে পালন করা উচিত।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মার্চ থেকে ডিসেম্বরের ঘটনা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের সময়কাল দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে আমরা যুদ্ধে এসে তারপরে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে যাই, বঙ্গবন্ধু প্রায়ই কিন্তু বলতেন মাস্টারদা সূর্যসেন, তিতুমীরের কথা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ভূখন্ডটি স্বাধীন করার প্রচেষ্টা এর আগেও হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নানা বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গগুলো এসেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি হয়তো এই দেশ দেখে যেতে পারবো না কিন্তু আমার প্রজন্ম ভালো থাকবে। সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ তাদের জন্য নির্মাণ করে যাবো।”
তিনি আরও বলেন, আমাদের যদি ত্যাগ করার মানসিকতা না থাকে তাহলে কিন্তু আমরা কিছু অর্জন করতে পারব না। সেটা আমার ব্যক্তিজীবনে হোক, আমার সমাজ বা আমার রাষ্ট্র হোক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, জাতীয় চার নেতার আদর্শ যেটাকে এ খুনী চক্র ভেবেছে তাদেরকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদর্শকে দাফন করা যাবে। বাংলাদেশের আদর্শ হচ্ছে গঠনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ। যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। বর্তমান সময়ে আমরা যে সামপ্রদায়িকতার তান্ডব দেখলাম এ বাংলাদেশ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ না, এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর না, এই বাংলাদেশ জাতীয় চার নেতার না। আমরা সেই ১৯৭২ এর সংবিধানের বাংলাদেশে ফেরত যাবো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে।
সমাপনী বক্তব্যে নীলদলের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, রক্তে ভেজা ৩রা নভেম্বর উপলক্ষে আয়োজিত এ ওয়েবিনারে আমরা শহীদদের স্মরণ করছি। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আজকের সভা থেকে আমরা বলতে চাই এই যে জাতির বিবেক, যারা সততা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং নেতার প্রতি তাদের যে আনুগত্য প্রকাশ ঘটিয়েছেন সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। একটি দেশের নেতৃত্ব কেমন হতে পারে। কত সৎ, নির্লোভ এবং কমিটেড হতে পারে নেতার প্রতি। তাদেরকে অনেক বার লজ্জিত করা হয়েছে, কিন্তু তারা কখনো মাথা নত করেনি, যার ফলশ্রুতিতে তারা শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আজকের যে বাংলাদেশ কিন্তু এই বাংলাদেশকে যারা এনে দিয়েছেন যাদের রক্তে ভেজা এই বাংলাদেশ তাদেরকে আমরা ভুলে যাচ্ছি, তাদেরকে আমরা স্মরণ করতে পারছি না। এটা আসলে সত্যিই দুর্ভাগ্যের বিষয়। আমরা নীলদল আজকে এই আয়োজনটি করেছি। জেলহত্যাকারী ও এর পেছনে যারা রয়েছেন তাদের বিচার চাই এবং এদের বিচার যেনো দ্রুত হয় সেজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাতে চাই।
ওয়েবিনারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের শিক্ষক নেতা রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দ আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম ও বিটিভির অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।