খবর৭১ঃ দেশে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকা, অনেক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ‘গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেছেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনে বহুদলের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণ বিশ্লেষণ করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ অনিবার্য। ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতাও আমার কাছে গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত মনে হয়।’
বুধবার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে মূল্যায়ন তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় মাহবুব তালুকদার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন।
দেশে নির্বাচন নিয়ে সংকট চলছে এমন মন্তব্য করে মাহবুব তালুকদার এই সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চাবি নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তৃণমূলের এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে আমার কথা’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে তার মত তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার।
গত ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এ সময় ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও একটি পৌরসভা ভোট হয়। এই সময়ের মধ্যে তার সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই লিখিত বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের বিদ্রোহী নেতা ও বিএনপির স্থানীয় নেতারা অনেক জায়গায় ভোটে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ভোটের মাঠে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও কক্সবাজারে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে দুই জন। এছাড়া অনেক জায়গায় সংঘর্ষও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সার্বিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক সমঝোতা ব্যতীত এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ জরুরি বলেও মত দেন তিনি। বলেন, ‘এহেন সংক্ষিপ্ত সময়ে আকস্মিকভাবে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। তারপরও কিছু কথা থেকে যায়।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া প্রার্থীদের নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের টার্নআউট মোটামুটি ভালো ছিল, শতকরা ৬৯.৩৪ ভাগ। কিন্তু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে ৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত হওয়া এই নির্বাচনকে ম্লান করে দিয়েছে। অন্যদিকে ৯টা পৌরসভায় তিনজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন যেহেতু অনেকের মধ্যে বাছাই, সেহেতু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচিত হওয়া বলা যায় কি?’
১৫ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে’ গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার নীরবতা তাকে হতাশ করেছে তিনি বলেন, ‘মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা কী গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সামিল হতে অনীহা প্রকাশ করছি?’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তিনজনের প্রাণহানি ঘটনাকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ বলে মন্তব্য করেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘আমি সর্বদা বলে এসেছি জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয়। তবু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে সহিংসতা রোধ করা গেল না। নির্বাচনে ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের ওপরই দায় এসে পড়ে।’
নির্বাচনের সব দুর্ঘটনা অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারা, প্রতিপক্ষকে হুমকি দেয়ার মত অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
‘সহিংসতা রোধে কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি এবং হবে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে একজন সংসদ সদস্যকে সতর্কবার্তা পর্যন্ত প্রেরিত হয়েছে।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমার দায়িত্বপালনকালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগভাবে দায়িত্বপালনের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। যে সব স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এর জন্য যারা দায়ী, প্রমাণসাপেক্ষে তাদের আটক করা হয়েছে। যারা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরও আটক করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে আরও অনেককে আইনের আওতায় আনা হবে।