খবর৭১ঃ দেশে চলমান নয়টি জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মধ্যে ছয়টিতে বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে এনেছে সরকার। এখন থেকে যত বেশি বিনিয়োগ করা হবে তত বেশি মুনাফা কম পাওয়া যাবে।
বিনিয়োগের অঙ্কের ভিত্তিতে তিন ধাপে লাভের হার ঠিক করে দিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার পুনঃবণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
ছয়টি স্কিম হলো- ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-মেয়াদী হিসাব এবং ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড। তবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-সাধারণ হিসাব, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মুনাফা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনবেন শুধু তাদের জন্য পরিবর্তিত এই হার কার্যকর হবে। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি পুনঃবিনিয়োগ করলেও নতুন হারে মুনাফা দেওয়া হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান- দুই ক্ষেত্রেই মুনাফার এই নতুন হার প্রযোজ্য হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এই আদেশ জারির আগে যেসব সঞ্চয়পত্র কেনা হয়েছে সেগুলোতে কেনার সময়ের হারে মুনাফা দেওয়া হবে। তবে মেয়াদ শেষে পুনঃবিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে মুনাফার নতুন হার। সব সঞ্চয় স্কিমে ক্রমপুঞ্জিভূত বিনিয়োগ বিবেচনা করে প্রযোজ্য হারে মুনাফা দেওয়া হবে। এই আদেশ জারির পরে বিনিয়োগ করা অর্থের মুনাফা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিয়ে প্রযোজ্য হারে তা দেওয়া হবে। যৌথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর বর্ণিত সব সঞ্চয় স্কিমে মোট বিনিয়োগের ওপর হিসাব করে ঠিক করা হবে, তারা কী হারে মুনাফা পাবেন। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর ক্রমপুঞ্জিভূত বিনিয়োগের পরিমাণ আলাদাভাবে হিসাব করা হবে। সব সঞ্চয় স্কিমে মুনাফা সরল হারে দেওয়া হবে।
দেশে বেশি বিক্রি হয় পারিবারিক সঞ্চয়পত্র। পাঁচ বছর মেয়াদী এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার বর্তমানে পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। নতুন নিয়মে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে ওই হারেই মুনাফা মিলবে। তবে বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফা কমে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ মিলবে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা আরও কমে পাওয়া যাবে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে।
পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফা আসে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে। নতুন নিয়মে এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার কমে হবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
তিনমাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে তিন বছর শেষে মুনাফা মিলবে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। নতুন নিয়মে এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১০ শতাংশ, আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মিলবে ৯ শতাংশ হারে।
পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নতুন নিয়মে এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ মিলবে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা কমে মিলবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে বর্তমানে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। নতুন নিয়মে এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা কমে পাওয়া যাবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে ২৪ মাস পর কিন্তু ৫ বছরের আগে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ মুনাফা প্রযোজ্য। নতুন নিয়মে এই বন্ডে বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে মুনাফা কমে আসবে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাওয়া যাবে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি করলে মুনাফা কমে আসবে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবে বিনিয়োগে বর্তমানে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এই স্কিমে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।