উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলা ৫০শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। নানাবিধ সমস্যা, চিকিৎসক সংকট,তাদের অবহেলা, সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। অপরদিকে, কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। এখানকার বর্তমান চিত্র দেখলে মনে হবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই যেন বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির রোগে আক্রান্ত। এদিকে সচেতন মহলের তেমন কোন খেয়াল নেই।জরুর ও নার্স বিভাগে রোগীদের নিকট থেকে সরকারী টাকা ছাড়াও বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে কুকুরের বসবাস প্রকট আকার ধারণ করেছে।কর্তৃপক্ষের এদিকে কোন খেয়াল দেখা যায়নি। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, অফিস সুত্রে জানা যায়, ২১জন চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র ৩ জন।গুরুত্বপূর্ণ গাইনী বিভাগে জরুরীভাবে চিকিৎসা বা অপারেশনের কোন ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০শয্যায় উন্নত হলেও ওষুধ সরবরাহ করা হয় ৩১শয্যার। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএ ডা: শরীফ শাহবুর রহমান,ডা: ফারহানা ইসলাম ও ডা: তরিকুল ইসলাম নামে ৩জন চিকিৎসক আছেন। ইউনিয়ন পয্যায় ১৪জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ডা:বাবুরাম মন্ডল,ডা:ফারজানা ইসলাম,ডা:ফারজানা মুন্নী,ডা: নিশাত সুলতানা ও ডা: নিশাত খানম নামে ৫জন চিকিৎসক বর্তমান কর্মরত আছেন।এছাড়া ডা: সাকিবা বিনতে হান্নান মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। তার ছুটি ১৫জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু তিনি অদ্যাবধি যোগদান করেননি। অধিকাংশ চিকিৎসক অফিস সময়ে স্থানীয় ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ১৮জন নার্সের মধ্যে আছেন ১৫জন,২জন সুপার ভাইজার মধ্যে আছেন সবিতা নামে ১জন,তবে তিনি নড়াইলে ডেপুটেশনে আছেন।মিডওয়াইফ ৪টি পদের মধ্যে ১জনও নেই। ল্যাবটরিতে ৩জনের মধ্যে জয়ন্তী দাশ নামে ১জন আছেন।এক্সেরে মেশিনটি দীর্ঘ ৫-৬ বছর নষ্ট বা অকেজো রয়েছে।দেড় বছর আগে আসা আল্ট্রাসনো যন্ত্রটিও শুরু থেকেই নষ্ট। ডেন্টাল বিভাগে শুরু থেকে চিকিৎসক নেই। তবে ইনাম নামে একজন টেকনোলজিষ্ট রয়েছে। তাকে দিয়ে মাতৃকালিন মহিলাদের অফিসিয়াল কাজকর্ম করানো হচ্ছে।ডেন্টাল চেয়ার ও অন্যান্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। একটি অ্যাম্বুলেন্স, তার বয়স ১৬ বছর। সেটি নড়বড়ে। ফার্মাসিষ্ট ২জনের মধ্যে আশিষ বাগচী নামে ১জন আছেন । তিনি চিকিৎসকদের চিকিৎসা পত্র অনুযায়ী ওষুধ রোগীদের সরবরাহ করেন না মর্মে অভিযোগ রয়েছে। রোগীরা চিকিৎসকের চিকিৎসা পত্র অনুযায়ী ওষুধ আনতে গেলে তাদের বলেন, এইমাত্র ওষুধ শেষ হয়ে গেছে,নেই! চিকিৎসকরা যেনেও রহস্যজনক কারণে না জানার ভান করেন বলে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির বিভাগে রামরাজত্ব কায়েম ও ওষুধ নয়-ছয় করেন বলে উপজেলার বাঐশোন গ্রামের রোগী জাহাঙ্গীর ও টিটো মিয়া যুগান্তরকে অভিযোগ করেন।আশীষ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান। সরেজমিন ১৩ আগষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ না থাকায় দীঘদিন ধরে অন্তঃসত্ত্বাদের অস্ত্রোপচারসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে । এ বিভাগে বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ গাবলার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মিলন শেখের স্ত্রী স্বপ্না নামে একমাত্র মহিলা গাইনী বিভাগে ভর্তি আছে । ১১ আগষ্ট নরমালে তার একটি বাচ্ছা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার তেমন এমটা খোজ খবর রাখেননা বরে জানান। ওই ওয়ার্ডে একমাত্র মোহন নামে এক সহকারী ব্রাদার,পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে একমাত্র শান্তি দাশ ও সুপার ভাইজার রুমে ভারপ্রাপ্ত সুপার ভাইজার বিদিশা রায়কে দেখা গেছে। তবে বিদিশা জানান,তৃপ্তী নন্দী, নাসরিন সুলতানা, পুর্ণিমা গোস্বামী, ডিউটিতে আছেন। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোথাও দেখা বা খুজে পাওয়া যায়নি।এদের মধ্যে নার্গিস সুলতানার রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাকে অর্থ নেয়াসহ খারাফ ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসারত কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ নাসির মাহমুদ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উত্থাপন করলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শরীফ শাহবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার রুমে গিয়ে দেখা যায় তখন বেলা সাড়ে ১২টা বাজে কিন্তু তিনি রুমে নেই। প্রধান অফিস সহকারী শেখ আশরাফ হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, মাউলী ইউনিয়নের তেলিডাঙ্গা গিয়েছেন অফিসিয়াল কাজে। তার পাশের রুমে ক্যাশিয়ার গোলাম কিবরিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,ইউএইচএ স্যার চাচুড়ী ইউনিয়নে গিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়,ইউএইচএ ওইদিন অফিসেই আসেননি।ওয়ার্ড সমুহে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের রুমে থাকা অধিকাংশ ফ্যান দীর্ঘদিন নষ্ট রয়েছে। যার কারণে প্রচন্ড গরমে রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের রোগীর ১টি ওয়ার্ড সব সময়ই বন্ধ থাকে । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সেবারমান দিন দিন কমে আসছে।এ বেহাল দশার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই দায়ী বলে রোগীদের অভিযোগ।পাশাপাশি অত্র উপজেলার রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে রীতিমত বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবার মান বাড়ানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইতিপূর্বে অনিয়ম,শৃংখলাভঙ্গ ও দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানা যায়। দোষীরা বহাল তবিয়তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাম-রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছেন। একমাত্র ইসিজি যন্ত্রটি সচল আছে বলে জানা যায়।জরুরী বিদ্যুতের জন্য একটি জেনারেটর থাকলেও তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ রাখার ব্যবস্থা থাকা উচিত। কিন্তু তা নেই।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে কুকুরের উপদ্রবে রোগীরা ভয়ে ভিতরে যেতে চায়না।কিন্তু কর্তৃপক্ষ জেনেও কোন পদক্ষেপ না নিয়ে কুকুরদের রীতিমত খাবার সরবরাহ করে লালন পালন করে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ শাহবুর রহমান এপ্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন,‘রবিবার আমি অফিসিয়াল কাজে বাইরে ছিলাম। ৬০টি ফ্যানের মধ্যে সবগুলোই নষ্ট। নষ্ট ফ্যান ও টয়লেটগুলির বিষয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিতভাকে অবহিত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। কালিয়া উপজেলাটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানে চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন বেশী।নতুন করে স্থাপনা নির্মান করে চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হবে। এজন্য অত্র অঞ্চলের সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।’