খবর৭১ঃ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে একদিকে বর্ষা আর অন্যদিকে ডেঙ্গু, জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটখারাপের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব। বর্ষাকালে আবহাওয়ার তারতম্য খুব বেশি হয়। চিকিৎসকেরা এই সময়টাতে খাবারের ব্যাপারে বেশি সতর্ক হতে বলছেন। কারণ এই সময়ই সব চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে জীবাণুরা। এ সময়ে অনেকেই ভাজাভুজির দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। কিংবা একটু বৃষ্টি হলেই হাতের মুঠোফোনে খাবার ডেলিভারির অ্যাপে রেস্তরাঁয় খাবার অর্ডার করে ফেলছেন। তাই সাবধানে থাকার পাশাপাশি খাবার নির্বাচনেও হতে হবে সচেতন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সময় কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা যায়, ততটাই ভালো। এবার থেকে ঘন ঘন রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনার সময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। মাছ-মাংস না খেলে মন ভালো থাকে না? কিছু পুষ্টিবিদের মতে কিন্তু বর্ষাকালে মাছ, মাংস ও ডিম যতটা সম্ভব কম পরিমাণে খাওয়া যায়, ততই ভাল। বিশেষ করে মাছ, কারণ এটি মাছেদের প্রজননের সময়। সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে বর্ষাকালে সেটিও এড়িয়ে চলুন। রান্না করার সময় খাবারে রসুন ও পেঁয়াজের পরিমাণ কমান।
বর্ষার সময় শাক এড়িয়ে চলার কথা বলা হয় সব সময়। কারণ বর্ষায় গাছের পাতায় পোকামাকড় বাড়ে, আর খুব ভালো ভাবে তা পরিষ্কার করা সম্ভবও হয় না। এর ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে। জীবাণুযুক্ত এ সব শাক-সবজি পাকস্থলীর জন্য বিপজ্জনক। এ কারণে ডায়েরিয়া ও খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়।
কোনো সময়ই কেটে রাখা ফল খাওয়া উচিত না। এই সময় তো নয়ই। বাতাসের সংস্পর্শে তার ওপর নোংরা ব্যাকটেরিয়া জন্মায়।
বর্ষার সময় কোল্ড ড্রিংক এড়িয়ে চলুন। কোল্ড ড্রিংক আমাদের শরীরে খনিজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে উৎসেচকগুলো ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। এতে মারাত্মক হজমের সমস্যা তৈরি হয়। পেটে ইনফেকশনও হতে পারে।
বর্ষায় কোনো ধরনের ফল বা সবজির রস বাইরে খাওয়া যাবে না। যদি একান্তই খেতে হয়, তবে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে হবে। বাইরে তৈরি বর্ষায় ফলের রস, কুলফি, ঘোল, আখের রস, দই জাতীয় খাবার নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
যে কোনো খাবার ভালো করে রান্না করে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। কাঁচা খাবার বর্ষায় না খাওয়াই ভালো। বর্ষায় এ ধরনের খাবারে জন্ডিস, টাইফয়েডের আশঙ্কা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
যা খেলে ভাল থাকবে শরীর
ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। শ্বাসকষ্ট দূর করতে মধু দারুণ কাজ করে। আধা গ্রাম গুঁড়া করা গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু ও আদা মিশিয়ে দিনে তিনবার খেলে হাঁপানি রোগে উপকার পাওয়া যায়।
বর্ষার মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে মৌসুমী সবজি ও ফল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া জরুরি। আপেল, জাম, লিচু, ন্যাশপাতি এই সব মরসুমি ফল খান। এ ছাড়া অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রাখুন ওল, মিষ্টি আলু, গাঁঠি কচু, করলা ইত্যাদি সব্জি। শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শরীর আর্দ্র রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি খান।
ডাবের পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। কারণ ডাবের পানিতে রিবোফ্লোবিন, নিয়াসিন, থায়ামিন ও পিরিডক্সিনের মতো উপকারী উপাদানে ভরপুর। ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা আক্রমণ করতে পারে না।
বর্ষায় নিয়মিত লেবু খেতে পারেন। কারণ লেবুতে ‘রুটিন’ নামের বিশেষ ফ্লাভোনয়েড পাওয়া যায়, যা শিরা ও রক্ত জালিকার প্রাচীর শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া লেবুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা সর্দিকাশির সমস্যা দূরসহ বিভিন্ন ক্যানসার নিরাময়ে সহায়তা করে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ফুসফুস পরিষ্কার রাখে এবং হাঁপানির সমস্যা দূর করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্ষায় খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। খালি পেটে অথবা নাশতার পর ১ কোয়া রসুন খাতে পারেন। সামান্য তেলে অর্ধেক কোয়া রসুন ভেজে তা এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে বুকে জমে থাকা কফ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শরীর থেকে জ্বর ও ঠান্ডা দূর করতে প্রতিদিন ২-৩ কোয়া রসুন কাঁচা খেতে হবে।