স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট
২৯ জুলাই, বিশ্ব বাঘ দিবস। ‘বাঘ রক্ষায় সুন্দরবন, সুন্দরবন বাঁচায় লক্ষ প্রাণ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের অন্যতম আবাসস্থল সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাট ও খুলনায় কোনো কর্মসূচি নেই এই দিবস উপলক্ষে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে আলোচনাসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে দিবস পালনের কার্যক্রম।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে করা একটি জরিপের ফলাফলে বর্তমানে সুন্দরবনে ১১৪ টি বাঘ রয়েছে। ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে পরিচালিত জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১০৬টি। এর আগে ২০০৪ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী ৪৪০টি বাঘ ছিল। এর মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ৮৯টি পুরুষ ও ১৭০টি স্ত্রী বাঘ এবং ১২টি বাচ্চা বাঘ রয়েছে। এ ছাড়া বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় ৩২টি পুরুষ ও ১২৮টি স্ত্রী বাঘ এবং ৯টি বাচ্চা বাঘের অবস্থান জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল। মাত্র ১৪ বছরে ৩২৬টি বাঘ কমে যাওয়া বা মারা যাওয়াকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন সচেতন মহল। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সুন্দরবনের বাঘ বিলুপ্ত হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনের বাঘের মৃত্যুর জন্য ৯টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হচ্ছে— প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস), লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়া, মিঠাপানির অভাব, খাদ্য সংকট, বন ধ্বংস, বাঘের আবাসস্থল অভাব, চোরাশিকারি, অপরিকল্পিত পর্যটন ও বনের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল। এর সঙ্গে বাঘ রক্ষায় আবাসস্থল সংরক্ষণ, বনের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের বিকাশ, বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধসহ নানা সুপারিশ করেছেন তারা।
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও জীব-বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’ এর চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, আশঙ্কাজনক হারে সুন্দরবনে বাঘ কমেছে। এটা বাঘের জন্য একধরনের হুমকি। তবে বাঘ ও সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকার সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ বনভূমিকে অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সংরক্ষিত বনা লের যে শর্ত তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে বাঘও সাবলিল বিচরণ করতে পারবে। আর সাবলিল বিচরণের ফলে বাঘের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে। প্রজনন বৃদ্ধি পেলে বাঘও বৃদ্ধি পাবে। বিলুপ্তি হাত থেকে রক্ষা পাবে সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব বাঘ দিবসে আমরা প্রতিবছর নানা আয়োজন করে থাকি।গেল বছরও সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতে এবার আমরা কোনো কর্মসূচি রাখি নেই। তবে বাঘ রক্ষায় নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’