আব্দুল আওয়াল, মদন থেকেঃ নয় বছর বয়স হাঁসি মনির। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিতে কোনদিন পা রাখতে পারেনি সে। হাঁটা শুরুর পর থেকেই প্রতিবন্ধী (অন্ধ) বাবাকে পথ দেখায় হাঁসি। স্বাদ আছে সাধ্য নেই হাঁসিমনির। অন্য শিশুদের মত বিদ্যালয়ে যেতে মন চায় তার।
আমারও তো মন চায় অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাইতে। তাদের সাথে খেলাধুলা করতে। বাবারে ভিক্ষা করতে নিয়া না আইলে আমরা কিতা খাইয়াম? এভাবেই আবেগে ছোট্র শিশু হাঁসিমনি মদন উপজেলা সদরে প্রতিবন্ধী (অন্ধ) বাবাকে নিয়ে ভিক্ষা করার সময় এ কথাগুলো বলে সে।
হাঁসিমনি মদন উপজেলার ৮নং ফতেপুর ইউনিয়নের মাখনা দেওয়ান পাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী হাসিম উদ্দিনের মেয়ে।
প্রতিবন্ধী হাসিম উদ্দিনের স্ত্রী সন্তানসহ ৬ সদস্যের পরিবার। রয়েছে তার ১ ছেলে ও ৩ মেয়ে। হাঁসিমনি সবার বড়। হাসিম উদ্দিন ১৮ মাস বয়স থেকেই অন্ধ হয়ে যায়। এ থেকেই তার মা তাকে নিয়ে ভিক্ষা করে।
মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে ভিক্ষা করেন। বাচ্চা হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী সুফিয়া আক্তার সন্তানদের দেখা শোনা করেন। সংসারে আর কেহ না থাকায় বড় মেয়ে হাঁসিমনিকে হাঁটা শুরুর পর থেকেই তাকে নিয়ে ভিক্ষা করেন হাসিম উদ্দিন। হাসিম উদ্দিনের ভিটা ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই। ভিক্ষা করা ছাড়া তার সংসার চলে না। কোন দিন ৫কেজি
আবার কোন দিন ৭কেজি চাল পান। এতেই তার সংসার চলে যায়। তবে পরিবারের কেহ অসুস্থ হয়ে পড়লে এ সময় চিকিৎসা করাতে কষ্ট হয় তার। নিজের অসুস্থ হলে খেয়ে না খেয়ে চলে সংসার।
হাঁসিমনি এ প্রতিবেদকে বলে, আমার অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাইতে, তাদের সাথে খেলাধুলা করতে ইচ্ছা হয়। বাবার সাথে না গেলে আমরা কিতা খাইয়াম? আমার স্কুলে যাইতে মন চায়। আমি স্কুলে যাইতে চাই।
হাসিম উদ্দিন এ প্রতিবেদকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি ১৮ মাস বয়সের বাচ্চা থেকেই মা আমাকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করত। পরে আমি স্ত্রী ও এখন সন্তান হাঁসিমনিকে নিয়ে ভিক্ষা করি। আমার যে কিছুই নাই। ভিক্ষাই আমার সম্ভল। না হয় এই বাচ্চাকে নিয়ে কেউ ভিক্ষা করে? এ দুনিয়ায় এমন মানুষ আছে? আমারও তো বয়স ওইছে এহন আর হাঁটতে পারি না। কষ্ট হয়। মেয়েডারও হয়। কি করাম পেট যে চলে না? আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই এই টাকা দিয়েতো আমার সংসারের কিছু ওয়না। কেউ যদি আমারে সাহায্য করত তাহলে বাড়ির সামনে একটি দোকান দিয়ে মেয়েটারে নিয়া একটা চেলা ঘর বানাইয়া বসে পরতাম। আমার যে একটি ঘর আছে মেঘ আইলে পানি পড়ে। বৃষ্টি বাদল আইলে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসে থাকতে হয়। সরকার শুনছি ঘর দিতাছে। আমি কি এমন একটি ঘর পাইতে পারি না? হাঁসিমনিকে নিয়ে কেন ভিক্ষা করেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যে আমার শেষ সম্ভল। ও যদি আমাকে পথ না দেখায় কি করে আমি গ্রামে গ্রামে যাইব? ও না গেলে যে আমি অচল। মনডাতো চাইয়েই আমার মেয়ে অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাক। খেলাধুলা করুক। এ পথ যে আমার বন্ধ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আমরা সমাজসেবা অফিসে ভিক্ষুকের একটি তালিকা প্রেরণ করেছি। এতে হাসিম উদ্দিনের নামও আছে। হাসিম উদ্দিনকে কিভাবে কর্মসংস্থান করা যায় এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। সে যেন সরকারি বরাদ্দ একটি ঘর পায় এ নিয়েও স্যারের সাথে কথা বলব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ জামান আহাম্মেদ বলেন, উনাকে বলেন একটি আবেদন করার জন্য । উনি যদি ভিক্ষা ছেড়ে ব্যবসা করতে পারে তা হলে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে তাকে ব্যবসার পুঁজি দিতে আমরা সহযোগিতা করব।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধী হাসিম উদ্দিনকে দ্রুত সরকারি একটি ঘর দেয়া হবে। শিশুটিকে নিয়ে যেন আর ভিক্ষা করতে না হয় তাকে একটি ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেব। সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা সে পাবে। শিশুটির স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।