সৈয়দপুরে পুলিশ কর্মকর্তাকে মারপিটের অভিযোগের মামলায় দুই ভাই জেলহাজতে

0
555

সৈয়দপুর প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকারি আদেশ অমান্য ও সরকারি কাজে বাঁধা এবং থানার পুলিশ পরিদর্শককে (তদন্ত) মারপিট করে জখম ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনায় শহরের ব্যবসায়ীর দুই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার গভীররাতে (২৪ জুলাই) সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলার আসামীরা হচ্ছে, সৈয়দপুরের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের ছেলে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন (২৮) ও আতিক হোসেন (২৬)। সৈয়দপুর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাদেরকে আজ শনিবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রমিজ আলমের উপস্থিতিতে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে শহরের বিমানবন্দর সড়কের ক্যান্টনমেন্ট রোড বাজার মোড়ে ভ্রাম্যমান আদালত ও তল্লাশির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় শহরের নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা ও শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের দুই পুত্র ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন (২৮) ও আতিক হোসেন (২৬) লকডাউন উপেক্ষা করে তাদের ব্যবহৃত সিলভার রঙের একটি প্রাইভেট কার নিয়ে বেপরোয়া গতিতে শহরের উল্লিখিত স্থানে আসেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা সিগন্যাল দিয়ে তাদের প্রাইভেট কারটির গতিরোধ করেন। এ সময় কঠোর লকডাউনের মধ্যে সরকারি বিধি অমান্য করে রাস্তায় গাড়ি বের করার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও মো. রমিজ আলম ব্যবসায়ী আতিফ হোসেনের এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন। এতে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন দন্ডের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে দ্রুতগতিতে সটকে পড়ার অপচেষ্টা চালান। এ সময় আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে তারই সরকারি গাড়ি নিয়ে সৈয়দপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ধাওয়া করে পুলিশ সদস্যরা ব্যবসায়ী আতিফ হোসেনের প্রাইভেট কারটিকে শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কের বিসিক শিল্প নগরী সংলগ্ন পঁচানালা ব্রীজের ওপর আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় অভিযুক্ত আতিফ হোসেনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির হতে বললে গাড়ি থেকে বের হয়ে আতিফ হোসেন পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সে উত্তেজিত হয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমানের পরিহিত সরকারি পোষাক টেনে ছিঁড়ে দেয় এবং তাকে কিল ঘুষি মেরে জখমপ্রাপ্ত করেন। এ সময় সঙ্গীয় অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা পরিদর্শক আতাউর রহমানকে রক্ষা করতে গেলে তাদের মধ্যেও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে তাদেরকে সেখান থেকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে ধস্তাধস্তিতে আহত সহোদর দুই ব্যবসায়ীকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ দুপুর পর্যন্ত তারা সেখানে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ছিল। এদিকে এ ঘটনায় সরকারি আদেশ অমান্য, সরকারি কাজে বাঁধা দান, কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে মারপিটে আহতসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শণের অভিযোগে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন ও আতিক হোসেনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। আজ শনিবার সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে থানায় ওই মামলা করেন। মামলা নম্বর: ২৫। জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর আলতাফ হোসেনের দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ ঘটনাটি নিয়ে গতকাল শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি সমাধানে সৈয়দপুর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু প্রশাসন কারও কোন কথায় কর্ণপাত না করে তারা আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। ফলে দীর্ঘ সময়ের আলোচনায় প্রশাসন তাদের কঠোর অবস্থানে থাকায় শেষ রক্ষা হয়নি আইন অমান্য করা দু ভাইয়ের। এদিকে শহরের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর দুই পুত্রের বিরুদ্ধে থানায় মামলার বিষয়টি “টক অফ দ্যা টাউনে” পরিণত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত থেকে গোটা শহরে সব শ্রেণী পেশার মানুষ এ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার পর থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তোলপাড় চলছে। এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষ বিপক্ষে নানা রকম মন্তব্যের ঝড় বইছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here