গর্ভাবস্থায় মধু খাওয়া নিরাপদ!

0
192

খবর৭১ঃ
নারীদের গর্ভকাল এমন একটা সময় যখন শুধু হবু মা নন, তার আশপাশের সমস্ত মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েন মায়ের খাওয়াদাওয়া নিয়ে। গর্ভাবস্থায় কী খাবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়তে হয়। এমনই একটা খাবার মধু যা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। গর্ভাবস্থায় বা প্রেগন্যান্সিতে মধু খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। যদি আপনার কোনও ভাবে এলার্জি না থাকে প্রেগন্যান্সিতে আপনি নির্ভাবনায় মধু খেতে পারেন। মধু শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত।

মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মধুতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেনটস এবং মধুর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হবু মায়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইনফেকশনের হাত থেকেও রক্ষা করে। মধু সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণের কারণে তার প্রচুর সুনাম। এর পাশাপাশি এটি স্বাস্থ্যকর এবং চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সব বয়সের মানুষের জন্যই মধু উপকারী । মধুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে।

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশমন্টোজ। আরও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশএনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।

প্রাচীনকাল থেকে মধুকে প্রাকৃতিক খাবার ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। মধুর সঙ্গে বিভিন্ন ঔষধি গাছ, শেকড়, লতাপাতা মিশিয়ে নানা রোগের ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিন মধু খেলে পাওয়া যায় অনেক উপকার। চিকিৎসকদের মতে, গর্ভবতী মায়েদের জন্যেও মধুর অনেক উপকারিতা রয়েছে।

মধুতে থাকা নানা পুষ্টিকর ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এছাড়া ইমিউনিটি সিস্টেমকেও সক্রিয় করে তোলে। মধুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও এনজাইম থাকার কারণে এটি গর্ভবতী নারীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মধু শরীরকে নানা রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে।

মধুতে অ্যান্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য আছে। তাই এটি সর্দি কাশি ও বিভিন্ন জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গর্ভবতী নারীরা চা অথবা হালকা গরম পানির সঙ্গে মধু খেলে উপকার পাবেন। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

মধুতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীরা মধু খাওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমাতে পারেন।

গর্ভবতী নারীদের কোষ্টকাঠিন্য হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। মধুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকার কারণে এটি ডায়রিয়া ও কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। কারণ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কৌষ্ঠকাঠিন্য থেকে বড় বিপদ হতে পারে। মধু সেখানে বড় বন্ধু।

গর্ভবতী নারীরা সাধারণত মানসিক চাপ এবং অনিদ্রায় ভুগে থাকেন । এ সমস্যা সমাধানে রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে ২ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়। ঘুম ভালো হয়।

বিশুদ্ধ মধু চেনার উপায়

গর্ভবতী মায়েরা মধু খাবেন অবশ্যই, তবে কিছু সাবধানতাগুলো মেনে। যে মধুটা কিনছেন, তার গুণগত মান কেমন খুব সহজেই কিন্তু সেটা বুঝে ফেলা যায়।

আসল মধু দুই আঙুলের মাঝে নিয়ে ঘষলে কোনও চ্যাটচেটে ভাব পাবেন না। নকল মধু কিন্তু চ্যাটচেটে হয়; কারণ মিষ্টতা বাড়ানোর জন্য ওতে চিনি এবং অন্য মিষ্টি পদার্থ মেশানো হয়।

আসল মধু একটু ঘন হয় এবং পাত্রের মধ্যে সহজেই নাড়াচাড়া করে না; মধু ভালো না হলে তা পাত্রের মধ্যে তরলের মতো নাড়াচাড়া করে। আসল মধু পানিতে তাড়াতাড়ি গুলে যায় না।

ব্লটিং পেপার আসল মধু সহজেই শুষে নিতে পারে না। নকল মধু ব্লটিং পেপার সহজেই শুষে নেয়।

এছাড়া, আসল মধুতে কিছু অবিশুদ্ধ জিনিস থাকে, যা পাত্রের নীচে থিতিয়ে পড়তে দেখা যায়। নকল বা বিশুদ্ধ নয় এমন মধু একদম পরিষ্কার হয় ।

স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই চিনির বদলে মধু খাওয়া পছন্দ করেন। গর্ভবতী হলেও সেটা করা যায় তবে সাধারণ মাত্রায়। সারাদিনে ৩-৪ টেবিলচামচের বেশি মধু খাওয়া ঠিক নয়। মধু ফ্রুকটোজ, গ্লুকোজ এবং মলটোজের অন্যতম উৎস হওয়ায় যথেষ্ট ক্যালোরির জোগানও দেবে শরীরকে।

তবে বেশি মাত্রায় কোনও জিনিসই খাওয়া ভালো নয়। মধু ফুটিয়ে না খাওয়াই ভালো। ফোটালে বা খুব গরম পানিতে দিলে এর গুণাগুণ নষ্ট নয়। অতিরিক্ত মধু সেবনে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, পেটে অস্বস্তি হতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে মধু খাবেন না। এছাড়াও, আপনার শরীরের পরিস্থিতি বিচার করে আপনার ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ান যদি আপনাকে মধু খেতে বারণ করে তবে মধু খাবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here