খবর৭১ঃ কয়েক লাখ বছরে মানুষের দেহের আকারপ্রকারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু কেন? জবাবে বিবর্তনই বলে থাকেন সকলে। সেটা ভুল নয়। বিবর্তনের জেরেই তো প্রাণীদেহে ধীরে ধীরে নানা বদল আসে। কিন্তু নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এবার এই পুরনো ধারণাও ধীরে ধীরে বদলাতে হবে। কেননা, মানবদেহের আকার-প্রকারে এই পরিবর্তনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির টুবিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই নতুন গবেষণাটি করেছেন। গবেষণাটি ‘নেচার কমিউনিকশনস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় তাঁরা ‘হোমোজেনাস’ গোত্রের তিনশোরও বেশি ফসিল থেকে দেহ ও মস্তিষ্কের আকার নিরূপণের চেষ্টা করেছেন। এবং এসব তথ্য কয়েক লাখ বছরের পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের গতিবিধির সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন। এসব ফসিল বা জীবাশ্ম যখন জীবিত মানুষ ছিল তখন তারা কী ধরনের জলবায়ুতে বেঁচে ছিলেন তা বের করারও চেষ্টা করেছেন।
গবেষকেরা দেখেছেন, গত কয়েক লাখ বছরে মানবদেহের আকৃতি পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ু, বিশেষত তাপমাত্রাই মূল ভূমিকা পালন করেছে। তীব্র শীত, রুক্ষ আবহাওয়ার সঙ্গে বড় দৈহিক গঠনের সম্পর্ক রয়েছে। আবার উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে খর্বকায় আকৃতির সম্পর্ক রয়েছে।
ক্যামবব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রে মনিকা একজন প্রাণীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ। তিনিই এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দীর্ঘদেহী হলে শীতল আবহাওয়া থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়। মানুষ যত লম্বা হয়, তত তার শরীর কম বিস্তৃত হয়, আর তার ফলে আরো কার্যকরভাবে তাপ শুষে নিতে পারে।
তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যাপার অন্য প্রাণির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। তবে এখন জানা যাচ্ছে, কয়েক লাখ বছর ধরে মানবদেহের আকৃতির পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ুই বড় ভূমিকা রেখেছে।
গবেষণাটিতে মস্তিষ্কের আকারের উপরও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, অন্তত তিন লাখ বছর আগে আফ্রিকায় ‘হোমোসেপিয়েন্স’ এর উদ্ভব। কিন্তু ‘হোমোজেনাস’ এর অস্তিত্ব ছিল আরো আগে।
এই হোমোজেনাসের মধ্যে ‘নিয়ান্ডারথালস’ ‘হোমো হাবিলিস’ ও ‘হোমো ইরেকটাস’ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হোমো হাবিলিসের মতো আগের প্রজাতিগুলোর তুলনায় হোমোসেপিয়েন্সের মস্তিষ্ক ৫০ শতাংশ ভারী ও তিন গুণ বড়। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে এখনো নানা মতবাদ রয়েছে।
তবে গবেষকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের আকৃতি পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ুর ভূমিকা ছাড়াও আরো অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে।