ঈদকে সামনে রেখে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কৌশলি পদক্ষেপ

0
288

খবর৭১ঃ  চলতি মাসেই ঈদ-উল আযহা । বিশ্বজুড়ে করোনার মহামারির কারণে দীর্ঘদিন আটকে থেকে দেশে আসতে পারছিলেন না প্রবাসীরা। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে লক্ষাধিক প্রবাসী। ঈদের সময় দেশে আসলে তাদের ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হবে না, সেই সাথে তাদের মাধ্যমে দেশে করোনার নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা রয়েছে । অন্যদিকে একেবারে ফ্লাইট বন্ধ করে দিলে প্রবাসীদের ক্ষোভ বাড়তে পারে। এমন শঙ্কায় ফ্লাইট বন্ধ না করে কৌশলি পদক্ষেপ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

ইতিমধ্যে  দেশে ভয়ঙ্কর রূপে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার। ৭ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ সেই সাথে  সর্বোচ্চ শনাক্ত ছাড়িয়েছে ১১ হাজারের বেশি। এমন সময় প্রবাসীরা দেশে আসলে তাদের মাধ্যমে ছড়াতে পারে করোনার নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট। এমন শঙ্কায় সরকারের নির্দেশনা অনুসারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের কড়াকড়ি না করে, কোয়ারেন্টিনের বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

৫ জুলাই নতুন বিধি নিষেধ আরোপ করেছে বেবিচক, যা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কয়েকদিন পরেই দেশে আসলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকলে ঈদের দিনে বাড়িতে থাকা সম্ভব হবে না। যাতে করে প্রবাসীরা হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে অনগ্রাহী হয়ে ঈদের সময়ে দেশে আসার সিদ্ধান্ত বদলায়। আবার ফ্লাইট চালু থাকায় যাদের জরুরি প্রয়োজন তারা আসতে বাধা রইলো না।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বেবিচক একক সিদ্ধান্তে ফ্লাইট বন্ধ কখনওই করেনি। স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনার আলোকেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ ছিল, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখার। তবে প্রবাসী কর্মীদের কাজে ফেরার বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্লাইট চালুর সুপারিশ করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিদেশে কাজে ফেরা চালু রেখে, দেশে আসা রোধ করার কৌশল নিতে হয়েছে। এ কারণে একবারে ফ্লাইট বন্ধ করা হয়নি, তবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে আগ্রহী না হয়ে অনেকে দেশে আসতে চাইবে না। আবার যার জরুরি প্রয়োজন সে দেশে আসতে পারে। আবার যাদের টিকা দেওয়া আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠান কোয়ারেন্টিনে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

বেবিচক ২০টি দেশের ওপর কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। আর এই ২০ দেশের মধ্যে ৭টি দেশে প্রবাসী কর্মীদের অবস্থান বেশি। ২০ দেশের মধ্যে আট দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভারত, নেপাল, বৎসোয়ানা, মঙ্গোলিয়া, নামিবিয়া, পানামা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তিউনিশিয়া– এই আট দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাবে না। তবে বিশেষ অনুমতি নিয়ে এসব দেশ থেকে আসা যাবে।

প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরা নিশ্চিত করতে কোনও দেশের যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বেবিচক। ১২ দেশ থেকে আসলে ১৪ দিন সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজের খরচে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। দেশগুলো হলো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলোম্বিয়া, কোস্টারিকা, জর্জিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, উরুগেয়ে। তবে এসব দেশ থেকে কেউ যদি করোনার ভ্যাকসিন গ্রহন করে আসেন, তাহলে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে না থেকে বাড়িতে যেয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শুধু মাত্র এমিরেটস এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ১৭টি ফ্লাইট যাত্রী বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এসব দেশে থেকেই ঈদের ছুটিতে দেশে আসবেন প্রবাসীরা।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বিমানবন্দরে সকল যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হয়। কারও যদি করোনার লক্ষণ দেখা যায়, তবে তাকে আইসোলেশন কিংবা হাসপাতালে পাঠানো হবে।

ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকলে কেউ আক্রান্ত থাকলে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। আবার যারা ভ্যাকসিন দিয়ে আসবেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। ফলে অতিরিক্ত মাত্রায় করোনার সংক্রমণ রোধ করা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here